ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ইনজুরিতে হুমকির মুখে সাফজয়ী এই তারকা ফুটবলারের ক্যারিয়ার, দেখার কেউ নেই

আর কত দর্শক হয়ে থাকবেন কৃষ্ণা রানী!

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০১:০৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আর কত দর্শক হয়ে থাকবেন কৃষ্ণা রানী!

কৃষ্ণা রানী সরকার

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম সেরা তারকা কৃষ্ণা রানী সরকার। তুখোড় এই ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের প্রথম সাফ জয়ে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। ২০২২ সালে নেপালের বিরুদ্ধে ফাইনালে করেছিলেন জোড়া গোল। ২০১৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া এ ফুটবলার শুরু থেকেই দলের আস্থার প্রতীক। কিন্তু খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় শত্রু ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তিনি দলের বাইরে আছেন। যে কারণে ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার দলের সঙ্গে থাকতে পারেননি। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে সদ্যই শেষ হওয়া ফিফা আন্তর্জাতিক সিরিজে কৃষ্ণা ছিলেন দর্শক! কিন্তু আর কতদিন তাঁকে দর্শক হয়ে থাকতে হবে এ প্রশ্ন এখন সবার।

মূলত ডান পায়ের চোট অনেকদিন থেকেই ভোগাচ্ছে কৃষ্ণা রানী সরকারকে। মাঝেমধ্যে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নামতেন। কিন্তু সেটা ছিল সাময়িক। পায়ের ব্যথা নিয়েই গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে ফুটবলে খেলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পায়ের চোট জাতীয় দল থেকে ছিটকেই দিয়েছে কৃষ্ণাকে। তাইতো গত ১ ও ৪ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে দুটি ফিফা ম্যাচ খেলা হয়নি তার। ২০১৪ সালে ইসলামাবাদে সাফ চ্যাম্পিয়শিপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় কৃষ্ণার। ওই ম্যাচে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেন। ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে। সেই যে কৃষ্ণার পথচলা শুরু, এরপর টানা প্রায় ১০ বছর জাতীয় দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় হয়ে আছেন।

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এবারের প্রীতি ম্যাচের আগ পর্যন্ত তিনি কখনোই বাদ পড়েননি। বর্তমানে বাফুফের ডরমেটরিতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন কৃষ্ণা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, কৃষ্ণাকে মাঠে ফিরতে কমপক্ষে তিন মাস লাগবে। প্রিয় লাল-সবুজের জার্সি গায়ে খেলতে না পেরে সঙ্গতকারণেই খারাপ লাগছে কৃষ্ণার। এ প্রসঙ্গে তিনি হতাশার সুরে বলেন, খুবই খারাপ লাগছে এভাবে বসে থাকতে। এটা আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। নিজের সার্বিক অবস্থা প্রসঙ্গে কৃষ্ণা রানী বলেন, সবশেষ এশিয়ান গেমসে আমি তিন ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয়টিতে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে পায়ে ব্যথা নিয়ে শেষ কয়েক মিনিট খেলেছি। অন্য দুই ম্যাচ মাঠে নামিনি। আমার পায়ের মেটাটারসেলের চোট।

পায়ের আঙুলে অনেক ব্যথা। বিশ্রামে থাকার পর এখন কিছুটা ভালো অনুভব করছি। তবে খেলার মতো অবস্থায় নেই। খেলা বা অনুশীলনের সময় কখন কিভাবে চোট পেয়েছিলাম বলতে পারব না। সাফ ফুটবলের পর থেকে ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। চিকিৎসা করে খেলাও চালিয়েছি। আসলে তেমন গুরুত্ব দেইনি তখন। বুঝতে পারিনি এতটা খারাপ অবস্থা হবে। চিকিৎসা চলমান অবস্থায় খেলেছিলাম। 
তিনি আরও বলেন, এশিয়ান গেমসে যাওয়ার পর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় খেলতে পারিনি। চীন থেকে দেশে ফিরে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার বলেছেন লম্বা বিশ্রাম নিতে হবে। বর্তমানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নিচ্ছি। ডাক্তার তিন মাসের কথা বলেছেন। মাঠে ফিরতে আশাবাদী কৃষ্ণা জনকণ্ঠকে আরও বলেন, আমি এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভাল বোধ করছি। যতো তাড়াতাড়ি ফেরা যায় সেই চেষ্টাই করছি। জানা গেছে, কৃষ্ণার ডানপায়ের মধ্যমা ও চতুর্থ আঙুলের গোড়ার দিকটা শুকিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে ডাক্তার বলেছেন, বিশ্রামের মাধ্যমে শুকিয়ে যাওয়া আঙুলগুলোকে আবার আগের মতো জাগিয়ে তুলতে হবে। এই মুহূর্তে রিহ্যাব চলছে তার।

তিন মাসের বিশ্রাম শেষে বোঝা যাবে ইনজুরি ঠিক কি অবস্থায় আছে। ছেলেবেলা থেকেই নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছেন বর্তমানে ২২ বছর বয়সী কৃষ্ণা। যে কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। তাইতো একসঙ্গে বয়সভিত্তিক পর্যায় ও জাতীয় দলের হয়ে মাঠ মাতিয়ে চলেছেন। কিন্তু ঘাতক চোটের কারণে দেশের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড বাইরে থাকায় অনেকের মধ্যেই দুশ্চিন্তা কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষ্ণা বাংলাদেশের সম্পদ। তার প্রতি প্রয়োজনীয় যতœশীল হওয়া উচিত বাফুফের। কেননা দেশকে আরও অনেক কিছু দেয়ার ক্ষমতা আছে তার।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এমন অনেকে মনে করছেন প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়কে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানো উচিত। এ বিষয়ে তারা বাফুফে ও সরকারের ক্রীড়া প্রশাসনের দৃস্টি আকর্ষন করেছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে সময় মতো সুচিকিৎসা করাতে না পারলে থেমে যেতে পারে এই তারকা ফুটবলারের বর্নময় অগ্রযাত্রা। বর্তমানে তার যে বয়স তাতে অনন্তত আরও চার পাঁচ বছর দাপটে খেলতে পারবেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে। 
দেশে-বিদেশে, ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন নারীরা। অদম্য নারীরা ফুটবল খেলে নিজের পরিবারকে বদলে দিচ্ছেন। প্রতিকূলতা জয় করে ফুটবল খেলে টিনের ছাপড়া ঘর এখন পাকা দালান হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল ও সাফ জয়ী দলের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় কৃষ্ণা রানী সরকারের। সাফের ফাইনালে বাংলাদেশের তিন গোলের মধ্যে দুটি গোলই করেছেন কৃষ্ণা রানী। আলো ঝলমলে কৃষ্ণার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে।

সেবার খেলেছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় সুতি ভিএম পাইলট মডেল হাইস্কুলের হয়ে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে অর্থনীতিতে স্নাতকে পড়া কৃষ্ণা একসময় কাকাতো ভাইদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। একবার তো মা রাগ করে বল কেটে ফেলেছিলেন। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে কৃষ্ণার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলা শুরু। এরপর একে একে খেলেছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই ও চূড়ান্ত পর্বে। বয়সভিত্তিক সাফে খেলেছেন একাধিকবার।

×