ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ

টাইগারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২১:২২, ৪ অক্টোবর ২০২২

টাইগারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ

টি২০ বিশ্বকাপে এভাবেই আনন্দ ভাগাভাগি করতে চায় টাইগাররা

একের পর এক সিরিজ হার, বছরের পর বছর ব্যর্থতা- টি২০তে সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না বাংলাদেশের। গত বিশ্বকাপে কোন মতে সুপার টুয়েলভে উঠলেও সেখান থেকে ফিরতে হয়েছিল শূন্যহাতে। অনেক নাটকীয়তার পর নেতৃত্বে ফেরা সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, হঠাৎ দুই-একটা জয়ের চেয়ে ভাল দল হয়ে ওঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওই একবারই মাত্র শিরোপা জেতা ভারত যেমন এখনও প্রতিটি আসরে ফেবারিট।

সুপার সাকিবের ওই মন্তব্যের ভাল দিক হচ্ছে, এবার আর কেউ প্রত্যাশার ফানুশ ওড়াচ্ছেন না। বলছেন না এই করব, সেই করব। ১৬ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক পর্ব দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৪ অক্টোবর, হোবার্টে, প্রতিপক্ষ প্রাথমিক পর্ব পেরিয়ে আসা একটি দল। গ্রুপ-২এ শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে আরও আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার আগে নিউজিল্যান্ডে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ। যেখানে আরেক দল পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার মতো শীতপ্রধাণ দেশে বিশ্বকাপের ঠিক আগে দুবাইয়ে ক্যাম্প করা এবং সেখানে দুর্বল আরব আমিরাতের সঙ্গে দুটি টি২০ খেলে লাভ কী হল, সেই প্রশ্ন থাকছেই। তবে সাকিবের অনুপস্থিতিতে যার নেতৃত্বে ২-০’ ব্যবধানে জয় এসেছে, সেই নুরুল হাসান সোহান জানিয়েছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজে এবং বিশ্বকাপে এটা কাজে দেবে। নিউজিল্যান্ডের এই সিরিজটা বিশ্বকাপের আগে টাইগারদের জন্য কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার বড় সুযোগ, সুযোগ আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়ার।
তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম অবসরে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নেই। ওপেনিংয়ে পুরনো সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে এশিয়া কাপ থেকেই নতুন চেষ্টায় মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গী সাব্বির রহমান যথারীতি আমিরাতের দুই ম্যাচেও ব্যর্থ। সাকিব ফেরায় টপ অর্ডারে কার ব্যাটিং পজিশন কি হবে? বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান যেন নিজের ছাঁয়া। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আনকোড়া আমিরাত ব্যাটসম্যানদের কাছেও বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের ঠিক আগে এই সিরিজে অন্তত চারটি ম্যাচ হবে অগ্নিপরীক্ষা। নিউজিল্যান্ডের দ্রুতগতির পিচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইনজুরিতে পড়ার ইতিহাস পুরনো। তেমন কিছু হলে বিপদ আরও বাড়বে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ আমিরাতে স্বাগকিদের বিপক্ষে ২-০’ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। টি২০তে যে সাফল্য এল প্রায় এক বছর পর। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে স্পিনসহায়ক পিচ বানিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছিল ৩-২’ ব্যবধানের জয়।

ওই সিরিজের পর টি২০ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপে এবং পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একের পর এক ব্যর্থতায় দলের মনোবলটাই ভেঙে পড়ে। আমিরাতে নেতৃত্ব দেয়া সোহান তাই মনে করেন এই জয় নিউজিল্যান্ডে ও বিশ্বকাপে ভাল করতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে, ‘অবশ্যই দেখবেন যে, শেষ কিছুদিন ধরে আমরা ক্লোজ কিছু ম্যাচ হেরেছি। আমার কাছে মনে হয়, এটা ভাল অভ্যাস আমরা জয়ের ধারায় ফিরেছি। এই আত্মবিশ্বাস নিউজিল্যান্ড এবং বিশ্বকাপে ভাল করতে সহায়ক হবে।’
স্বাগতিক আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের জন্য দুবাইয়ে নেয়া প্রস্তুতিটা ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছেন  সোহান, ‘বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের আগে এ রকম ক্যাম্প, সুযোগ-সুবিধা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, প্রস্তুতিটা ভাল হয়েছে।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের পর মূল লক্ষ্য যে বিশ্বকাপ সেটিও জানিয়েছেন তরুণ এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করেই পরিকল্পনা করছি। এটা আমার কাছে মনে হয়, টিম ম্যানেজম্যান্টের পরিকল্পনা। নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কেমন থাকে, কন্ডিশন বুঝেই সিদ্ধান্ত হবে হয়ত।’ সিপিএল খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে থাকায় আমিরাতের ক্যাম্প এবং সিরিজে ছিলেন না অধিনায়ক সাকিব। ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডে থাকছেন বলে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস, ‘আরব আমিরাতে দল লড়াই করেছে।

জয়ে ফেরার প্রয়োজন ছিল সেটি তারা করতে পেরেছে। আমি মনে করি এই নিউজিল্যান্ড সিরিজটা বড় সুযোগ। তবে এই সিরিজ হবে দারুণ চ্যালেঞ্জিং ও কঠিন। কারণ, ক্রিকেট বিশ্বের দুটি বড় দলের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আশার বিষয় সাকিব দলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন শুরু থেকেই। সিপিএলে তার দল গায়ানা ছিটকে গেছে আসর থেকে। আমার বিশ্বাস সিরিজেও দলের পজেটিভ মনোভাব  দেখা যাবে।’  
আমিরাত থেকে দেশে ফিরে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান জানান পারফর্মেন্স দিয়ে বিশ্বকাপ দলে যে কেউ ঢুকতে পারে। তবে আসরের আগে এমন পরিবর্তনের কথা বলতে রাজি নন জালাল ইউনুস। তিনি বলেন, ‘নির্বাচকরা দল ঘোষণা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাকিব ছাড়া বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবাই ছিল। কোচ, অধিনায়ক একাদশ সাজিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফরেও তাই হবে। এর বাইরে কোন পরিবর্তনের বিষয় তো আলোচনা হয়নি।

আমরা তো যোগ্যদের নিয়ে দল দিয়েছি। আর কোন পরিবর্তন আনতে হলে সেটি তো নির্বাচকরা জানাবেন।’ অন্যদিকে স্কোয়াডে পরিবর্তনের কথা ভাবতেই চান না নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলেন, ‘এখন নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ। এরপর বিশ্বকাপের ভাবনা, অনেক সময় আছে হাতে। আর আমি তো মনে করি পরিবর্তন বা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নতুন কেউ আসবে কিনা সেটি আলোচনার বিষয় নেই। আমরা য্?া আছে তাই নিয়েই ভাবতে চাই।’

তবে নানা সূত্রে জানা গেছে আরব আমিরাতের পর যারা নিউজিল্যান্ডেও ব্যর্থ হবেন তাদের ভাগ্যে আসতে পারে পরিবর্তন। আর ইনজুরি বা অন্য সমস্যার কারণে আইসিসি স্কোয়াডে পরিবর্তনের সুযোগ রেখেছে। আরব আমিরাতে পারফর্মেন্স ও নিউজিল্যান্ডে দলের প্রতি প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘আরব আমিরাতে যে দলটাকে দেখলাম তাদের মধ্যে আমি গতি দেখেছি। দারুণ আত্মবিশ্বাসী এই নতুন দলটি। এখন প্রয়োজন পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা।

নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দলের সঙ্গে সাকিব যোগ দিচ্ছে। এটি হবে দলের জন্য আরও বড় শক্তি। একাদশে ভারসাম্য ফিরবে ব্যাটিং-বোলিংয়ে। দলও অধিনায়ককে পেয়ে আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তবে এটা আমরা জানি সেখানকার কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই সহজ হবে না। কিন্তু আমরা চাই ছেলেরা যেন চ্যালেঞ্জটা নেয়।’
আর বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে বাশার বলেন, ‘আমরা নতুন একটা দল দেখছি। এর মানে এই নয় যে একেবারে আনকোড়া। অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন নেই। আবার তরুণ কয়েকজন এসেছে দলে। আমি মনে করি এই দলটি যদি এই গতিতে খেলতে পারে তাহলে বিশ্বকাপে তাদের প্রভাব দেখা যাবে মাঠে।’ ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু চ্যালেঞ্জিং এই ত্রিদেশীয় সিরিজ। সাকিবদের দ্বিতীয় খেলা ৯ অক্টোবর, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

ফিরতি পর্বে পরপর দুদিন খেলতে হবে টাইগারদের। প্রথমে ১২ অক্টোবর স্বাগতিক কিউইদের বিপক্ষে। পরদিন পাকিস্তানের সঙ্গে। পরের ম্যাচ দুটিও ক্রাইস্টচার্চে। ১৩ অক্টোবর ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ফাইনাল ১৪ তারিখ। ১৫ অক্টোবর বিশ্বকাপে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেনে পৌঁছাবে টাইগাররা। সেখানে ১৭ ও ১৯ অক্টোবর আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ।

টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক অবস্থা বেশ নাজুক। শীর্ষ কোন দলের বিপক্ষে যে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে সেটি এবার এশিয়া কাপে প্রায় সমশক্তির দুই দল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের মধ্যে দিয়েই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এবার বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ। একই গ্রুপে আছে এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় টি২০ ফরম্যাটে দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও এই ফরম্যাটে দারুণ দল। এই তিন প্রতিপক্ষ ছাড়াও প্রাথমিক রাউন্ড থেকে অন্তত একটি শক্তিধর দলকে এবং আরেকটি ভয়ানক দলকে পাবে বাংলাদেশ।

কারণ প্রাথমিক রাউন্ডের দুই গ্রুপে খেলছে শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, হল্যান্ড, আরব আমিরাত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। এর মধ্যে গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে সিরিজ হার জিম্বাবুইয়ের কাছে এবং শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিয়মিতই হারে। সাকিবদের জন্য তাই বিশ্বকাপটা কঠিনই হতে যাচ্ছে।

×