
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথমবারের মতো একটি ছয় পায়ের উড়ন্ত রোবট পাঠাতে চলেছে চীন। ২০২৬ সালে নির্ধারিত ‘চাং’ই ৭’ মিশনের অংশ হিসেবে এই অত্যাধুনিক রোবটটি চাঁদের দুর্গম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন গহ্বরে অনুসন্ধান চালাবে, যেখানে বিজ্ঞানীদের ধারণা—জলবরফ জমে থাকতে পারে।
চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, রোবটটি হবে "অত্যন্ত বুদ্ধিমান" এবং এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি হাঁটতে, হামাগুড়ি দিতে, লাফ দিতে এবং রকেটচালিত প্রপালসন ব্যবহার করে উড়তে পারে। ফলে চাঁদের দুর্গম ও খাড়া ভূখণ্ডে পৌঁছানো সম্ভব হবে, যেসব জায়গায় সাধারণ চাঁদের রোভার পৌঁছাতে অক্ষম।
‘চাং’ই ৭’ মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো চাঁদের দক্ষিণ মেরুর চিরস্থায়ী ছায়াচ্ছন্ন গহ্বরে জমে থাকা জলবরফের খোঁজ পাওয়া। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই বরফ একদিন মানুষের চাঁদে দীর্ঘস্থায়ী বসবাসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি পানীয় জল, অক্সিজেন উৎপাদন এবং এমনকি রকেট জ্বালানি তৈরিতেও ব্যবহৃত হতে পারে। এর ফলে পৃথিবী থেকে সরবরাহ পাঠানোর প্রয়োজন অনেকটাই কমে আসবে।
এই রোবটটি চীনের মহাকাশ প্রকৌশলে এক বিপ্লব আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চাঁদের কঠিন ভূখণ্ড ও গভীর খাদগুলোতে যেখানে আলো পৌঁছে না, সেখানে উড়ন্ত রোবটের মতো প্রযুক্তিই একমাত্র ভরসা হতে পারে।
এই মিশনের আওতায় থাকবে একটি অরবিটার (কক্ষপথযান), ল্যান্ডার (অবতরণযান), চাঁদের রোভার, এবং এই বিশেষ উড়ন্ত রোবট। তারা একযোগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অনুসন্ধান চালাবে, মানচিত্র তৈরি করবে এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ মানব মিশনের উপযোগিতা মূল্যায়ন করবে।
চীন ‘চাং’ই ৭’ মিশনের পরপরই ‘চাং’ই ৮’ মিশন পরিচালনার পরিকল্পনা করছে, যা ‘৭’ মিশনের সঙ্গে সমন্বয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় চন্দ্র অনুসন্ধান নেটওয়ার্ক গঠনে কাজ করবে।
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে চীনা নভোচারী পাঠানো এবং একটি চাঁদ বেস গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। এই স্বপ্ন পূরণে জলবরফের উপস্থিতি ও তা ব্যবহারযোগ্য কি না—এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই রওনা দেবে ‘চাং’ই ৭’।
সানজানা