
ছবি: সংগৃহীত
আকাশে উড্ডয়নের ঠিক আগে বিমানের ককপিট থেকে একটি পরিচিত ঘোষণা শোনা যায়—‘সব যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে মোবাইল ফোনে এয়ারপ্লেন মোড চালু করার জন্য।’ অনেকেই একে সাধারণ নিয়ম বলেই মনে করেন, তবে এই ছোট্ট নির্দেশনার পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাজনিত কারণ।
ছোট এক ক্লিক, বড় নিরাপত্তা
এয়ারপ্লেন মোড চালু করার অর্থ, আপনার ফোন বা ট্যাবলেটের নেটওয়ার্ক, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ—সব রকম বেতার তরঙ্গ নির্গমন বন্ধ করা। এসব ডিভাইস সাধারণত ক্রমাগতভাবে সিগন্যাল খোঁজে বা সংযোগ স্থাপন করে। বিমানের উচ্চতায় থাকাকালীন এসব তরঙ্গ বায়ু নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে পাইলটের যোগাযোগ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। কখনো কখনো এই হস্তক্ষেপ খুব সূক্ষ্ম হলেও তা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিমানের যন্ত্রপাতিতে প্রভাব ফেলতে পারে মোবাইল তরঙ্গ
ফ্রান্সের বিমান নিরাপত্তা সংস্থা ডিজিএএসি (DGAC)-এর মতে, উচ্চতায় থাকা স্মার্টফোন যখন নেটওয়ার্ক খোঁজে, তখন তার তরঙ্গ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে এটি বিমানের সংবেদনশীল যন্ত্রপাতিতে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ায়। বিশেষ করে আবহাওয়া বা দিক নির্দেশনার মতো তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা হতে পারে, যা জরুরি মুহূর্তে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
৫জি আসার পর উদ্বেগ বেড়েছে
নতুন প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি ৫জি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ব্যবহার করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই তরঙ্গ বিমানের ‘রাডার অল্টিমিটার’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের ফ্রিকোয়েন্সির কাছাকাছি চলে যায়। যদিও এখনও এ বিষয়ে গবেষণা চলছে, অনেক দেশ ও বিমান সংস্থা সাবধানতা হিসেবে এয়ারপ্লেন মোড চালুর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
প্রযুক্তি উন্নত হলেও বিধিনিষেধ এখনো জরুরি
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এখন বিমানে ‘পিকোসেল’ নামে ছোট ছোট সেল টাওয়ার বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। এসব ব্যবস্থায় তরঙ্গ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ফলে হস্তক্ষেপের ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি মোবাইল নির্মাতারাও এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যা কম তরঙ্গ নির্গমন করে।
তবে এসব প্রযুক্তি পুরোপুরি চালু হতে এখনও সময় লাগবে। তার আগ পর্যন্ত নিরাপদ উড়ানের স্বার্থে বিমানযাত্রীদের উচিত এয়ারপ্লেন মোড অন করে রাখা।
নিরাপত্তার জন্য সবাইকেই নিতে হবে দায়িত্ব
ভবিষ্যতে হয়তো এমন প্রযুক্তি আসবে, যেখানে বিমানে ইন্টারনেট ব্যবহারে আর কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না। কিন্তু আজকের দিনে এটি এখনও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায়। এটি শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো বিমানের যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি অংশ।
তাই পরবর্তীবার বিমানে ওঠার সময় যখন এয়ারপ্লেন মোড অন করতে বলা হবে, তখন মনে রাখবেন—এটি শুধুই নিয়ম মেনে চলা নয়, বরং একটি সম্মিলিত দায়িত্ব।
সূত্র: https://3dvf.com/en/not-turning-on-airplane-mode-in-flight-can-have-real-consequences/
রাকিব