
ছবি: সংগৃহীত
ভিনগ্রহে এলিয়েন বা প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। মহাবিশ্বের বিশালতা আর সৌরজগতের বাইরের অসংখ্য গ্রহের সম্ভাবনা মাথায় রেখে বিজ্ঞানীরা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরবিচারে অনুসন্ধান। তবে দীর্ঘ গবেষণার পরও এখনো মেলেনি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ। তাই এবার প্রাণের খোঁজে পদ্ধতির পরিবর্তন আনছেন গবেষকেরা। নতুন করে তৈরি করা হয়েছে একটি উন্নত কম্পিউটার মডেল, যা আরও কার্যকরভাবে ভিনগ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে পারবে।
এই অভিনব মডেলটি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ ড্যানিয়েল আপাইয়ের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। গবেষকরা জানিয়েছেন, সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর মধ্যে কোনটি প্রাণের বাসযোগ্য, তা নির্ণয়ে নতুন এই মডেল অতীতের যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর।
এখন পর্যন্ত এলিয়েন বা প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো ‘পানি’র উপস্থিতিকে। কারণ পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য পানিই ছিল মূল শর্ত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবার সেই ধারণা থেকে সরে এসে তৈরি করেছেন বহুমাত্রিক একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি, যেখানে শুধু পানিই নয়, জীবের বিপাকীয় কার্যকলাপ, পরিবেশগত অনুঘটক, এবং তাপমাত্রার মতো একাধিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে কোনও গ্রহ প্রাণের উপযোগী কি না।
ড্যানিয়েল আপাই বলেন, “পৃথিবতে প্রাণ বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পরিবেশগত শর্ত প্রয়োজন। আমরা এখন এমন একটি মডেল তৈরি করেছি, যা সেই শর্তগুলোকে বিভিন্ন জীবের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করতে পারবে। এটি আর সরলভাবে ‘পানি আছে কি নেই’ সেই প্রশ্ন নয়, বরং অনেক জটিল উপাদান বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনার মাত্রা নির্ধারণ করবে।”
এই মডেলে ‘জীব মডেল’ ও ‘আবাসস্থল মডেল’—এই দুই পদ্ধতিকে একত্রিত করা হয়েছে। জীব মডেল জীবের বেঁচে থাকার জন্য কী কী লাগে তা মূল্যায়ন করে, আর আবাসস্থল মডেল দেখে কোনো গ্রহে সেই পরিবেশ বিদ্যমান কি না।
বিজ্ঞানীরা জানান, নতুন কম্পিউটার মডেলটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি বিভিন্ন গ্রহে ‘মিথেনোজেন’ নামের একধরনের প্রাচীন ও অনুজীব প্রাণের সম্ভাব্য উপস্থিতি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই জীবাণুগুলো চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে, এবং এদের চাহিদা বুঝেই মডেলটি নানা গ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী অনুসন্ধানে বিশ্ব বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব