ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর পায়ের তলার মাটির প্রায় ৭০০ কিলোমিটার গভীরে লুকানো রয়েছে একটি বিশাল পানির সাগর, যা পৃথিবীর সব মহাসাগরের মিলিত আয়তনের তিনগুণ বড়। এটি কোনো সাধারণ জলরাশি নয়, বরং এক রহস্যময় খনিজ পাথরের মাঝে আটকে থাকা পানি। এই পানির ভান্ডারের আকার এতটাই বিশাল, যে যদি তা সেকেন্ডে পুরো পৃথিবীকে গিলে খাওয়ার ক্ষমতা রাখতো।
এই পানির অস্তিত্ব আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০০টিরও বেশি ফিসমোগ্রাফ ব্যবহার করে ৫০০টিরও বেশি ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, কোথাও কোথাও তরঙ্গের গতি হঠাৎ কমে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা শনাক্ত করেন গভীর এক বিশাল পানির ভান্ডার।
এই পানিকে ধারণ করে রাখা পাথরের নাম ‘রিং উডাইট’। এটি একটি স্পঞ্জের মত গঠনের পাথর যা প্রচুর পানি ধরে রাখতে সক্ষম। পাথরের পরমাণু বিন্যাস হাইড্রোজেনকে আকৃষ্ট করে এবং পানিকে আটকে রাখে।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, যদি এই বিশাল পানির ভান্ডার কোনোভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপর উঠে আসে, তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থলভাগ পানিতে তলিয়ে যাবে। শুধুমাত্র কিছু উচ্চ পার্বত্য এলাকা যেমন এভারেস্ট তার চোড়াসহ বেঁচে থাকবে।
আরেকটি আশ্চর্য বিষয় হলো, পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা আগ্নিগিরির তাপ সত্ত্বেও এই পানি ভূমিকার মাধ্যমে উপরের অংশের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠকে আগ্নিগিরির তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা পর্দার কাজ করে।
পৃথিবীর এই গভীর রহস্যময় পানির অস্তিত্ব মানবজীবনের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্ভাবনার আলো হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন পৃথিবী পানির সংকটে পড়ে যাচ্ছে।
ফরিদ
