ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের খেদমত করার উপায়

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের খেদমত করার উপায়

ফাইল ফটো

যাদের মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা-বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। মা-বাবার মৃত্যুর পর যেসব খেদমত করা যায়:

বেশি বেশি দোয়া করা  
মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দোয়া করবে। আল্লাহ তায়াআলা আমাদেরকে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল-কুরআনে এসেছে, হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪)

মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]

দান-ছাদকাহ করা
মা-বাবা বেঁচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেঁচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে  সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে।  তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।

মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা  
মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া, তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। 

মা-বাবার আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা
সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে। (সহীহ ইবন হিববান:৪৩২)

ঋণ পরিশোধ করা
মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়।’(সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩)

কাফফারা আদায় করা    
মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা, ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)
[ সূরা আন-নিসা:৯২]

ক্ষমা প্রার্থনা করা
মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো। (আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬)

কবর যিয়ারত করা
সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অতঃপর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনান তিরমীযি :১০৫৪)।
 

এসআর

×