
কারামুক্ত হওয়ার পর শাহবাগ মোড়ে জনসভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। একটা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক একজন।”
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় কারামুক্ত হন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই তিনি রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত এক জনসভায় উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থান ও অভিমত তুলে ধরেন।
গত মঙ্গলবার (২৭ মে) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেন। বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বহুল আলোচিত এই রায় ঘোষণা করেন। ফলে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময়ের আইনি প্রক্রিয়ার অবসান ঘটে এ টি এম আজহারুল ইসলামের ক্ষেত্রে।
শাহবাগের জনসভায় আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি শুধু কয়েকটি বিষয় আপনাদের সামনে বলতে চাই। আল্লাহ যদি তৌফিক দান করেন, যদি বেঁচে থাকি, ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে বারবার দেখা হবে। আমি সর্বপ্রথম আমাদের মহামান্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের আদালত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। জনগণ যেন ন্যায়বিচার পায়, সে ব্যবস্থাই তারা করবেন।”
নিজ মামলার প্রসঙ্গে এ টি এম আজহার বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার মামলায় যেসব আইনজীবী নিযুক্ত ছিলেন। যতদূর পত্রপত্রিকায় পড়েছি, তারা অত্যন্ত স্বাধীনভাবে যুক্তি উপস্থাপন করে মামলার দুর্বলতা ও অসঙ্গতিগুলো প্রকাশ করতে পেরেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে, এই মামলার মাধ্যমে আগের সরকারগুলো কিভাবে নির্মমভাবে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে এবং দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছে।”
সাবেক এই যুদ্ধাপরাধী অভিযুক্ত নেতা বলেন, “সম্মানিত ভাই ও বন্ধুগণ, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের, যাদের কারণে আমি আজ মুক্ত। ৩৬ জুলাই ও ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের ফলেই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছিল।”
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামকে ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এসব অভিযোগের মধ্যে গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ অপরাধ ছিল। তার পক্ষে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করে ১১৩টি যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। এরপর দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে সর্বোচ্চ আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করেন।
কারামুক্তির পর জনসভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আজহারুল ইসলামের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনার দিকেও দৃষ্টি রাখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকের মতে, এই রায় এবং জনসভার ভাষণ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে।
আফরোজা