ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

ড. ইউনূস নেলসন ম্যান্ডেলা না হয়ে মাও সেতুং হলে দেশের ক্ষতি হবে: শামীম হায়দার পাটোয়ারী

প্রকাশিত: ০০:০৭, ১৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:০৮, ১৫ মে ২০২৫

ড. ইউনূস নেলসন ম্যান্ডেলা না হয়ে মাও সেতুং হলে দেশের ক্ষতি হবে: শামীম হায়দার পাটোয়ারী

ছ‌বি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মতো একটি জটিল প্রেক্ষাপটে নেলসন ম্যান্ডেলার মতো একতাবদ্ধকারী নেতা হতে পারতেন। কিন্তু তিনি যদি উল্টো মাও সেতুংয়ের মতো একপক্ষের মতবাদে আশ্রয় নেন, সবকিছুকে বাদ দিয়ে একমুখী রাজনীতি করেন, তবে তা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল ড. ইউনূস দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি যদি তা করতে পারতেন, তাহলে শান্তির জন্য বাংলাদেশ থেকেই তিনি আরেকটি নোবেল পুরস্কার পেতে পারতেন। তিনি ইতোমধ্যে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তা অর্জনের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।”

কিন্তু বর্তমানে ড. ইউনূস এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা তাকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। “ছাত্রদের কথায় অনেককে বাদ দিয়ে, সংস্কারের নামে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নারী কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যেটা ছিল তার মূল শক্তি— ইসলামপন্থী গোষ্ঠী— তারাই এখন তাকে চ্যালেঞ্জ করছে,” বলেন পাটোয়ারী।

তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূসের আজীবনের দর্শন এবং বর্তমান কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি বড় ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তিনি যদি সবাইকে নিয়ে চলতে পারতেন, তাহলে ভারসাম্য রক্ষা করে নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। কিন্তু একপক্ষীয় অবস্থান নিলে রাজনীতিতে কোনো ব্যালান্স থাকে না।”

শামীম হায়দার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশের ইসলামিক শক্তি অন্য দেশের মতো উগ্র না হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার। এই গোষ্ঠী যদি অসন্তুষ্ট হয়ে চরমপন্থার দিকে ধাবিত হয়, তাহলে পরিস্থিতি ইরান, তালেবান কিংবা আফগানিস্তানের মতো হয়ে উঠতে পারে। এজন্যই বিশ্বের সব দেশেই ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়াস চলে। আগে এই ভূমিকা পালন করত আওয়ামী লীগ। এখন অন্য কেউ যদি সেই জায়গা না নেয়, তাহলে দেশ একমাত্রিক ইসলামীকরণের পথে যেতে পারে।”

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “এই পরিস্থিতি ড. ইউনূস কীভাবে সামলাবেন?”

ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ধরে নিলাম ড. ইউনূস হয়তো ভোটের সময় ক্যারটেকার হেড হবেন বা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তখন যদি একটি একতরফা ভোট হয়, যেখানে সহিংসতা, বাধা, গাছ কাটা, ভোটার অনুপস্থিতি দেখা যায়, তাহলে এর দায় তার মতো একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্বের ওপরই পড়বে।”

“তিনি চাইলেই একটি সমঝোতা চাপিয়ে দিতে পারতেন,” বলেন পাটোয়ারী। “যদি তিনি বলতেন, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, ছাত্র গোষ্ঠী—সবার একটি অংশ থাকবে, সবাই ভোট না পেলেও প্রতিনিধিত্ব পাবে—তাহলে একটা অন্তত ভারসাম্য রক্ষা হতো। রাজনীতি ছাড় দিয়ে হয় না, চাপিয়ে দিতে হয়। আর সেই চাপিয়ে দেওয়ার ম্যান্ডেটই ড. ইউনূসকে দেওয়া হয়েছিল।”

পাটোয়ারী সতর্ক করে বলেন, “যদি তিনি এখনই শক্ত অবস্থান না নেন, তাহলে একসময় এই চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তার হাতে থাকবে না। তখন হয়তো তিনিই আফসোস করবেন—ভালো কিছু করার সুযোগ ছিল, তা কাজে লাগানো হলো না।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ সবার হাতে আসে না। বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন ১৯৭২ সালে, আর ড. ইউনূস পেলেন ২০২৪ সালে। এই সুযোগ নষ্ট হলে তার খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হবে। এখনো সময় আছে, তিনি চাইলে একটি পথ দেখাতে পারেন।”

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=BHMXfSmfEzQ

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×