
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে চলছে। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল স্বৈরাচার পতনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
ওয়ান এলেভেনের সময় ছাত্রদল জাতীয় রাজনীতির অশনিসংকেত ভেদ করে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে অবর্তীন হয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করলেও দেশি বিদেশী চক্রান্তের কারণে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত হয়। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নামে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে রাজনীতিতে মাইনাস ফর্মুলার ঘৃণ্য চেষ্টা করে এক এগারোর সরকার। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখে মঈন-ফখরুদ্দিন সরকার।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন (তৎকালীন) তারেক রহমানকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে আন্দোলন তীব্র হলে এক এগারোর সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও দেশি বিদেশী চক্রান্তের কারনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা, ফ্যাসিবাদী, একনায়কতন্ত্র শুরু করে। রাজনৈতিকভাবে মোকালেলা করতে না পেরে আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে বিএনপি ও সমভাবাপন্ন গণতান্ত্রিক বিভিন্ন দলকে পুলিশ, র্যা ব দিয়ে কোনঠাসা করতে থাকে। গায়েবি মামলা, গুম, হত্যা, জবর দখল শুরু করে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তাকের রহমানকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে লন্ডনে প্রেরণ করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে মালয়েশিয়াতে প্রেরণ করে।
এক এগারোর সেনাশাসকের নির্যাতনের কারণে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়াতে মৃত্যু বরণ করেন। একদিকে বড় ছেলেকে কাছে না পাওয়া, ছোট ছেলের মৃত্যু, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার। ক্যানন্টমেন্টের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার চক্রান্তে ব্যস্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী আন্দোলনের ডাক দিলেনে, দেশের মানুষ দেশনেত্রীর আহ্বানে ২০১৩-২০১৪ সালে রাজপথে নেমে আসে, আন্দোলনে করে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ র্যা ব দিয়ে রাজপথে লাশের পাহাড় তৈরী করে।
২০১৮ এর কোটা আন্দোলনে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়, পুলিশের মিথ্যা মামলার কারনে হাজার হাজার নেতাকর্মী অত্যাচার সহ্য করে কিন্তু কোটা আন্দোলন সফল করেই ঘরে ফিরে রাজপথের সাহসী সৈনিক ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো ছাত্রদল, ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের গায়েবী মামলা হামলার কারণে যথাসময়ে শিক্ষা সমাপনী করতে না পারায় কারো কারু বয়স তুলনামূলক একটু বেশি হলে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রদল যদি মাঠে না নামত তাহলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও সফল হতো না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকা অর্জন সব সময় রাজপথে। রাজপথে যখন ছাত্রদল থেকেছে, তখন গণতন্ত্রের বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরেছে। সেটি লক্ষ্য করা গেলো ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন কোটা বৈষম্য নিয়ে শুরু হলেও, ছাত্রদলের টার্গেট ছিলো, আন্দোলনকে বেগবান করার। এই আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন সরাসরি ছাত্রদের সাথে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একজন আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বনেতা হিসেবে পর্যবেক্ষণ করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান যেমন পরাধীন দেশের হাল ধরে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে মুক্তির আলো জ্বালিয়ে ছিলেন একই ভাবে ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই রাতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্রদল এক গোপন মিশনে নেমেছিলো। সেই গোপন মিশন ছিলো যে কোন মূল্যে খুনি হাসিনার পতন করতে হবে। এই আন্দোলনে তারেক রহমান বেছে নিয়েছিলেন, প্রচলিত নেতানেত্রীর বাহিরে ২০১৩ ও ২০১৮ পরীক্ষিত কিছু ছাত্রনেতাদের, যাদের কোন পদপদবী ছিলো না, যাদের দেশবাসি অন্যভাবে জানতেন, পুলিশ যাদের খুজে পেতো না। এই ছাত্ররা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সম্মুখ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং সেই প্রচেষ্টায় ছাত্রদল সফল হয়।
আন্দোলনকে বেগবান করতে একটি রাজনৈতিক ও গেরিলা ছক তৈরী করা হয়, আন্দোলনের দাবানল তৈরী হবে দেশের একটি রুট দিয়ে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী খুলনা, সিরাজগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার এবং সর্বশেষ গণভবন আক্রমন। ছাত্রদলের বিশেষ সেই টিম প্রায় ১ বছর যাবত এই পয়েন্টগুলিতে অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে কাজ করে। এই কাজ পরিচালনা করতে কেউ কেউ ছদ্মবেশ ধারণ করে। ঠিক ২৮ জুলাই ডিবি হারুন যখন ৬ সমন্বয়ক দিয়ে আন্দোলন তুলে নেওয়ার নাটক সাজায়, ততক্ষণে ছাত্রদলের বিশেষ সেই বাহিনীর কাছে তথ্য চলে যায়, আন্দোলনে নেমে পড়ে ছাত্রদলের গোপন ইউনিট। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের জেলে ভরে আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো আন্দোলন থামিয়ে দিবে কিন্তু বিএনপি ও ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী ছিল যারা এক একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক কিন্তু দলীয় পদে নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর ছাত্রদলের যে সকল নেতা-কর্মী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিপিড়নের শিকার তাদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি।
ছাত্রদল রাজপথে পিছনে ছিলো, সম্মুখে ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ছিলেন কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছিলেন ছাত্রদলের এবং সাধারণ শিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবের শিক্ষারার্থীদের একটাই চাওয়া ছিলো ছাত্রলীগের পতন ও ধ্বংস। বিএনপি ও দেশবাসী চেয়েছিলো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার। বিএনপি, ছাত্রদল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর সম্মিলত আন্দোলনে ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারে পতন হলেও একটি পক্ষ ছাত্রদলকে আড়াল করে বিজয় কেড়ে নিতে অপচেষ্টা করছে। কিন্তু ছাত্রদলের বিজয় মিশে আছে শহীদের রক্তের ঋণে, আহতের শরীরের যাতনায়, বোনের কান্নায়, মায়ের আহাজারিতে। ‘ আইন করে তুমি বসন্তর নাম পরিবর্তন করতে পারবে, কিন্তু ফুলফোটা বন্ধ করতে পারবে ন ‘- বিখ্যাত এই প্রবাদের মতো জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদলের অবদান হয়তো কাগজে লেখা থাকবে না, কিন্তু সারাবিশ্বে মুক্তিকামি জনগনের স্বাধীনতায় অনুপ্রেরণা জোগাবে ছাত্রদল। বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে ছাত্রদলের অবদান।
নাহিদা