
সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া এবং বনের ভেতর থেকে বনজ সম্পদ আহরণ এমনকি সকল ধরনের পর্যটক প্রবেশ তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। তাতে করে বনের ভেতর জীববৈচিত্র্য তার আপন গতিতে বেড়ে ওঠার একটা সুযোগ পেত। দীর্ঘ সময় বনের ভিতর মানুষের পদচারণা না থাকায় সেখানে প্রকৃতি তার আপন গতিতে চলে তার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে সক্রিয় হতো। কিন্তু বন দপ্তরের এ নিষেধাজ্ঞা এখন বনেরই কিছু অসাধু কতিপয় সদস্যের লোভের অনলে পড়ে তা ভঙ্গুর হতে বসেছে। জেলেরা দশ টাকার বিনিময়ে যেখানে বনে প্রবেশের সুযোগ পান কিন্তু বন দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের দিতে হয় হাজার হাজার টাকা। এতে করে বনের যেখানে অভয়ারণ্য রয়েছে সেখানেও এখন অবৈধভাবে মাছ এবং বনজ সম্পদ আহরণ করা হচ্ছে দেদার। তাতেই বনের প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ইকু সিস্টেম নষ্ট হয়ে পড়ছে। তবে জেলে ও বাওয়ালীদের বনে প্রবেশ করতে নিষেধ থাকলে তা কার্যকর হয় না তাদের অভাবের কারণে। সরকারের তিন মাস বনে প্রবেশ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলে এবং বাওয়ালীদের চাল সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যারা থাকেন তারাই কেবল এ সুযোগটুকু পেয়ে থাকেন। বনের বিশাল জেলে-বাওয়ালী থাকেন চাল বরাদ্দের আওতার বাইরে। তাতেই ভয়াবহ বিপত্তি তৈরি হচ্ছে। তাদের ক্ষুধা মেটাতে তারা গোপনে বনে প্রবেশ করে থাকেন। বনের ওপর যারা সারা বছরের জন্য নির্ভরশীল থাকেন তারা কি করে সরকারের সহযোগিতামূলক কিছু চাল পেয়ে তাদের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন? তাদের অভাবই বনকে ভালো থাকতে দেয় না। নিষিদ্ধকালীন সময়ে তারা ভয়ে ভয়ে বনে মৎস্য, কাঁকড়া এবং বনজ সম্পদ আহরণ করতে যান। তখন অল্প সময়ে খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরে থাকেন। অনেক মৎস্য ব্যবসায়ী আবার বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বন উজাড় করে থাকেন। এতে অসাধু বন কর্মকর্তাদের ভালো পয়সা রোজগার পাতি হয়। তখন অবৈধভাবে অভয়ারণ্যে পর্যন্ত মাছ, কাঁকড়া এবং বনের সম্পদ নির্বিঘ্নে আহরণ করতে পারেন জেলে ও বাওয়ালীরা। তবে সবচেয়ে বনের ভেতর জটিলতা তৈরি করছে বনদস্যুরা। তাদের অত্যাচারে সাধারণ জেলে ও বাওয়ালী বনে যেতে পারেন না। দীর্ঘদিন বনদস্যুদের কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও তা বর্তমানে মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। কারণ-বনে আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল দিত। সে কারণেই বনদস্যুরা স্যারেন্ডার করেছিল। এখন আবার পুরোদমে চলছে তাদের ভয়াবহ নৈরাজ্য ও অত্যাচার। তারাই মূলত এখন বনের সম্পদ ব্যাপকভাবে লুটপাটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বনের হরিণ এবং অন্যান্য সম্পদ হরিলুট হচ্ছে বলা চলে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে জেলে-বাওয়ালীদের ক্ষুধার্ত রেখে তা সম্ভব নয়। বনের আশপাশের জেলার মানুষদের বনের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সেখানে সরকারের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। একসময় উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক মঙ্গা দেখা দিত। তা এখন সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দূরীভূত করা গেছে। সেরকম পদক্ষেপ নিতে হবে উপকূলসহ বনের আশপাশের জেলাগুলোতে। তাছাড়া অসাধু বনকর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে বন রক্ষা করাটা অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়বে। ঘরের ইঁদুরে বান কাটলে তা কেউ রুখতে পারবে না।
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ
প্যানেল