ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ঈশ্বরদীতে বাজেটকে ঘিরে সিগারেট মজুদ ও কোটি টাকা আত্মসাৎ,দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী, পাবনা ॥

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:৪৪, ২৫ জুন ২০২৫

ঈশ্বরদীতে বাজেটকে ঘিরে সিগারেট মজুদ ও কোটি টাকা আত্মসাৎ,দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

জাতীয় বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী বাজারের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বেনসন, গোল্ডলিফ ও ডার্বিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট অবৈধভাবে মজুদ করে চড়া দামে বিক্রি করছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ ও সচেতন মহল থেকে দেশপ্রেমী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মাধ্যমে একটি ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোরালো দাবি উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও ঈশ্বরদী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে তদন্ত করে জানা গেছে, আসন্ন বাজেট ঘোষণার পূর্বে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি ও এসব সিগারেটের কারখানার স্থান পরিবর্তনের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে বিক্রি করছে। অথচ প্রতিদিন স্থানীয় ডিলারের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো সিগারেট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। একইভাবে প্রতিটি দোকানে ডিলারের পক্ষ থেকে সিগারেট বিক্রির রেড চার্ট ঝুলিয়ে রাখার জন্য দেওয়া হলেও রেড চার্ট ঝুলিয়ে রাখেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজেট ঘোষণার আগ থেকেই তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে উচ্চ মূল্যে সেই মজুদকৃত সিগারেট বিক্রি করে।

অভিযোগের তীর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দিকেও। স্থানীয়দের দাবি, তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এত বড় আকারের মজুদ এবং অবৈধ লেনদেন সম্ভব নয়। তাদের নীরবতার সুযোগ নিয়েই এই অসাধু চক্র নির্ভয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জানা থাকার পরও রহস্যজনকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে করে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি সাধারণ ভোক্তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈশ্বরদী ছাড়াও পাবনা জেলার ফরিদপুর, আটঘড়িয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সুজানগর, সাঁথিয়া এবং বেড়া উপজেলাতেও এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম বিস্তৃত। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন এই অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এই গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ ও সচেতন নাগরিক সমাজ ক্রমেই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা মনে করছেন, এমন ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমাজে দুর্নীতি আরও জেঁকে বসবে। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল একযোগে দেশপ্রেমী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মাধ্যমে ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা জোর দাবি জানিয়েছে যে, এই অপরাধের সাথে জড়িত সকল ব্যবসায়ী, তাদের সহযোগী এবং সংশ্লিষ্ট সকল অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তাদের প্রত্যাশা, দ্রুত এই সিন্ডিকেটকে ভেঙে দেওয়া হবে, লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে ফেরত আনা হবে এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন অপরাধ করার দুঃসাহস না পায়, তার জন্য কঠোর বার্তা দেওয়া হবে।

এই ঘটনা কি স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়াবে এবং অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে? এসব প্রশ্ন ভুক্তভোগী সচেতন মহলের।

ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ ও সচেতন নাগরিক সমাজের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভোক্তা অধিকার এর সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে জানার চেষ্টা করা হলেও কলটি রিসিভ করা হয়নি।

ঈশ্বরদীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন খান এসব অভিযোগের বিষয়ে বলেন, অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আফরোজা

×