
সাঁতার শেখা কেবল একটি ক্রীড়া নয়, এটি একটি জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা। আমাদের দেশে প্রতিবছর বহু মানুষ পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। এই মৃত্যু যন্ত্রণার পেছনে একটি বড় কারণ হলো সাঁতার না জানা। অথচ সাঁতার জানলে এসব মৃত্যুর অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। তাই বর্তমান সময়ে সাঁতার শেখা একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। চারদিকে অসংখ্য নদী, খাল, বিল, পুকুর ও জলাশয় ছড়িয়ে আছে। বর্ষাকালে প্রায়ই বন্যা হয়, গ্রামাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যায়, শহরেও রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। এসব পরিস্থিতিতে চলাফেরা করতে গেলে অনেক সময় পানির মধ্যে পড়ে যাওয়া, পিচ্ছিল জায়গায় পা ফসকে পড়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ করে পানিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এইরকম একটি সময়ে যদি কারও সাঁতারের দক্ষতা না থাকে, তাহলে বিপদ অনিবার্য। শুধু দুর্ঘটনা নয়, খেলাধুলার দিক থেকেও সাঁতার একটি চমৎকার ব্যায়াম। এটি শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমন্বিত কাজের ফল। নিয়মিত সাঁতার শরীরকে সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। শিশুদের শরীর ও মন গঠনের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী একটি ব্যায়াম। এছাড়াও, যাদের হাঁটুর সমস্যা, স্থূলতা বা হালকা বাতের ব্যথা আছে, তাঁদের জন্য সাঁতার একটি দারুণ চিকিৎসাস্বরূপ ব্যায়াম। অনেক উন্নত দেশে সাঁতার শেখাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিদ্যালয় পর্যায়েই। আমাদের দেশেও এই উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সাঁতার শেখানো বাধ্যতামূলক করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। শহরে ও গ্রামে সুইমিং পুল, পুকুর বা নিরাপদ জলাশয়ে সাঁতার শেখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাঁতার শুধু নিজের জীবন রক্ষার মাধ্যমই নয়, এটি মানবিক দায়িত্ববোধও জাগায়। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করার মানসিকতা গড়ে ওঠে, যদি আমরা নিজেরাই সাঁতার জানি। একজন সাঁতার জানা ব্যক্তি অনেক সময়ে প্রাণরক্ষাকারী হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, সাঁতার শেখা একটি নয়, বহু দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে, শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে, এমনকি অন্যের জীবন রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তাই দেরি না করে এখনই সাঁতার শেখা শুরু করা উচিতÑ নিজের জন্য, সমাজের জন্য, এবং দেশের জন্য।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
প্যানেল