ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৫২, ২২ জুন ২০২৫

বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ঠাঁই নেওয়ার প্রবণতা বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪৭৩ বাংলাদেশি। একই বছর ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ডাটাসেট থেকে এমন তথ্য মিলেছে। শুক্রবার বিশ্ব শরণার্থী দিবসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমাদের উদ্বিগ্ন, ব্যথিত এবং লজ্জিত করার মতোই। বাংলাদেশি নাগরিকরা ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সাইপ্রাস, বসনিয়া, অস্ট্রিয়ার মতো দেশে নাম নিবন্ধন করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পাপুয়া নিউগিনির মতো দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এশিয়ার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকংয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও বাংলাদেশিরা ঠাঁই খুঁজছেন। এমনকি ‘দুর্ভিক্ষের দেশ’ সোমালিয়াতেও গত বছর নিজেদের শরণার্থী পরিচয় দিয়ে ছয় বাংলাদেশি সেখানে থিতু হয়েছেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই, সমাজে একশ্রেণির তরুণের মধ্যে যে কোনো কায়দায় বিদেশ পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ সুযোগটিই নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্র। ভূমধ্যসাগর এবং লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও ইতালির উপকূল থেকে ঘন ঘন আসছে বাংলাদেশির মৃত্যুর দুঃসংবাদ। পাচারের বিভিন্ন পথ থেকে প্রতিনিয়ত উদ্ধার করা হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক। কূটনীতিকদের ভাষ্য থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী হিসেবে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছেন। করোনা মহামারির সময় দেশে আয়ের সুযোগ কমে যাওয়া এবং বৈধ পথে বিদেশ যাওয়া সংকুচিত হওয়াও দেশ ছাড়ার বড় কারণ। পাশাপাশি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিও এ প্রবণতা বাড়িয়েছে। বিদেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাটি দেশের জন্য সম্মানজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, দুটি কারণে বিশ্বে বাংলাদেশি শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বাড়ছে। এক, বাংলাদেশিরা যখন বিদেশ ভ্রমণে যান, তখন যেনতেনভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা হচ্ছেন সুযোগসন্ধানী। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি প্রকৃত অর্থে শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যোগ্য। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সুযোগসন্ধানীদের কারণে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃতদের সুযোগ কমে যাচ্ছে।
প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। শিক্ষাশেষে তাদের যথোচিত কর্মসংস্থানের বিষয়টি কি স্বদেশ নিশ্চিত করতে পেরেছে? তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বিদেশেই তাদের কাজ খুঁজে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে যোগ্যতা এবং স্তরভেদে চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিক থেকে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, নতুন কলকারখানা স্থাপিত হয়। ফলে কাজের সুযোগ বাড়ে। এমন বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তোলা চাই যেখানে জীবনের ও জীবনমানের, উপার্জনের নিশ্চয়তা থাকবে। অন্য দেশে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হওয়া কোনো কাজের কথা নয়, এটি জাতিগত লজ্জা। এর অবসানকল্পে ভাবতে হবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে।

প্যানেল

×