ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

গ্যাস সংকট ও এলএনজি

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ২২ জুন ২০২৫

গ্যাস সংকট ও এলএনজি

দেশে গ্যাস সংকট চলছে দীর্ঘদিন থেকে। সম্প্রতি দেশব্যাপী বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের কারণে এই সংকট বেড়েছে বহুগুণ। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও এলএনজির দামও। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ পেলে রেশনিং করে অর্থাৎ একখাতে কমিয়ে অন্যখাতে বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। দিনে এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। ২৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশে শীঘ্রই গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে প্রাকৃতিক তরলীকৃত গ্যাস এলএনজির আমদানি কমলে ভুগতে হবে বিদ্যুৎ, আবাসিক ও শিল্পখাতকে। প্রায়ই বিরূপ আবহাওয়া ও বর্ষাকাল বিধায় জাহাজ থেকে এলএনজি নেওয়া যাচ্ছে না ভাসমান টার্মিনালে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএনজি ছাড়া চাহিদার কাছাকাছি গ্যাস সরবরাহ ধরে রাখা যাবে না। দেশে আসা এলএনজির প্রায় পুরোটাই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এগুলো আসে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়। বর্তমানে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ তথা অস্থিরতা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যে। সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে তেল, গ্যাস ও এলএনজির দাম। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে হরমুজ প্রণালী দিয়ে জ্বালানি তেল ও পোশাক রপ্তানি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 
বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল এবং এক-তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবহন করা হয়। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালীতে এক ধরনের অবরোধ আরোপ করতে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে বাংলাদেশও এলএনজি আমদানি এবং মধ্যপ্রাচ্যে পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সে অবস্থায় স্বভাবতই বাড়বে এলএনজির দাম। বাধাগ্রস্ত হবে পোশাক রপ্তানিও। এ নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। 
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সর্বোচ্চ ৩৫ ডলারে এলএনজি কিনেছিল বাংলাদেশ। সংঘাতের ফলে ক্রমাগত বাড়ছে এলএনজি ও তেলের দাম। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত দ্রুত থেমে না গেলে এলএনজি ও তেল আমদানির বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হবে পেট্রোবাংলা ও সরকারকে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হতে পারে বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। ততদিন পর্যন্ত গ্যাস ও এলএনজির রেশনিংয়ের মাধ্যমে আবাসিক, বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতকে সামাল দেওয়ার বিকল্প নেই। গ্যাসের অভাবে সিএনজি স্টেশনগুলোতে দেখা যায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন। সময়মতো উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিতে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অথচ গ্যাস বিল প্রতিমাসে নিয়মিত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টাও। তবে কোনো আশ্বাসের বাণী শোনাতে পারেননি কেবল দুঃখ প্রকাশ ব্যতিরেকে। এর পাশাপাশি বলেছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি তথা ইরান-ইসরাইল সংঘাত অবসানের ওপর।

প্যানেল

×