ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩৯, ১৫ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ

২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার পর থেকেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা, এমন কি প্রায় যুদ্ধাবস্থা। এমন এক অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইল আবারও আকস্মিক হামলা চালিয়েছে ইরানে। এবারের হামলা ছিল এক কথায় ভয়াবহ ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। ইসরাইলের প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করেছে দেশটির সামরিক মুখপাত্র। হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভয়াবহ হামলায় দেশটির অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২০ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ শিশুও আছে। ইসরাইল এই হামলার নাম দিয়েছে অপারেশন রাইজিং লায়ন। তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে নাতাজ পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো হয় বিমান হামলা। ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেন্দ্রটি।
উল্লেখ্য, এই হামলার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের গাজায় যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব স্থগিতসহ সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও অনেকগুণ বেড়ে গেল। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি করতে ইচ্ছুক ছিলেন। আগামীকাল বৈঠকটি হওয়ার কথা। স্বভাবতই ইসরাইলের হামলার পর বৈঠকটি বাতিল করেছে ইরান। পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানও। ইসরাইলের তেল আবিব ও জেরুজালেমকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এতে ইসরাইলের কয়েকটি ভবন বিধ্বস্তসহ তিনজন নিহত হন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে দেশটি। যতদিন পর্যন্ত এই হুমকি থাকবে ততদিন পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। যা প্রকারান্তরে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এর পেছনে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেরও প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। গতকালের হামলার পর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুপ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন- ‘সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এবং এক সময় পরিচিত ইরান সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই একটি চুক্তি করতে হবে ইরানকে’।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরান ও ইসরাইলকে সর্বোচ্চ সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নিন্দাও করেছেন তিনি। হামলা পরবর্তী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, জর্দান, ওমান, কাতার, যুক্তরাজ্যসহ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ইসরাইলের এই হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হিসেবে অভিহিত করে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। 
১৯৪৮ সালে পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক মধ্যপ্রাচ্যে জোরপূর্বক স্বাধীন ইসরাইলী ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুরু হয়েছে একের পর এক যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম। পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরাইল কখনোই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘে বারবার স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ উঠলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগে তা ভেস্তে যায়। এরই জের ধরে সেখানে দীর্ঘদিন থেকে বিরাজ করছে যুদ্ধ, সংঘাত ও অশান্তি। সে অবস্থায় ইসরাইলসহ যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে ফিলিস্তিনকে।

প্যানেল

×