নীরব ত্যাগ আর অদৃশ্য ভালোবাসার নাম—বাবা

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার উদযাপিত এই দিনটি একটি সন্তানের জীবনে বাবার অপরিসীম ত্যাগ, দায়িত্ববোধ এবং নিঃশব্দ ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।

জীবনের নানান প্রেক্ষাপটে মায়ের মতো বাবাও থাকেন সন্তানের ছায়াস্বরূপ। অনেক সময় সমাজে বাবার ভূমিকাকে আড়ালে রাখা হয় কিংবা তেমন করে আলোচনায় আসে না। কিন্তু বাস্তবে তিনিই হয়ে ওঠেন একটি পরিবারের অবিচল ভিত।
“মা যদি হন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, তবে বাবা হচ্ছেন জীবনযুদ্ধের নির্ভরযোগ্য রক্ষাকবচ”—এই কথাটিই যেন বাস্তব হয়ে ধরা দেয় প্রতিটি পরিবারের প্রতিদিনের জীবনে।

বাবা দিবসে বিশ্বের নানা প্রান্তে সন্তানেরা নানা উপায়ে তাদের বাবাকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানায়। তবে অনেকেই আছেন যাদের বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। তেমনই একজন সন্তান আমি, পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা গ্রামের বাসিন্দা মো. মোতাহার আলী খানের সন্তান। 

৮ সন্তানের জনক আমার বাবা ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত কৃষিজীবী বাবা, যিনি ধান চাষ এবং দিনমজুরির মাধ্যমে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করতেন। সন্তানদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তিনি নিজের চাহিদাগুলো নীরবে বিসর্জন দিয়েছেন। ঈদের সময় সবাই নতুন কাপড় পেলেও, নিজের জন্য কখনো কিছু কেনেননি। পকেটে টাকা না থাকায় সন্তানের আবদার রাখতে না পারার যন্ত্রণায় লজ্জিত মুখটাও হয়ে উঠত নিঃশব্দ আর্তনাদ।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন আমার সংগ্রামী বাবা। যখন বাবার জন্য কিছু করার বয়স হলো, তখনই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। হয়তো এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা।

বাবারা সন্তানদের জন্য সারাজীবন নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করে যান, আর আমরা সন্তানরা অনেক সময় তাদের শেষ দিনগুলোতেও দিতে পারি না সঠিক সম্মান। এই দিনটিতে আমি শুধু আমার বাবার জন্য নয়, পৃথিবীর সব বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

বাবারা যেমন ছোটবেলায় সন্তানকে আগলে রাখেন, তেমনি সন্তানরাও যেন বাবাদের শেষ বয়সে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে। পৃথিবী থেকে যেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামক স্থানটি একদিন চিরতরে বিলীন হয়ে যায়।”

বাবা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বাবা শুধুই একজন ব্যক্তি নন, তিনি একজন জীবন্ত বটগাছ, যিনি সব ঝড় থেকে আগলে রাখেন তার সন্তানদের। বাবার জন্য একটাই কথা “মিস ইউ বাবা। তুমি শুধুই বাবা নও-তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ নায়ক।”