
ছবি: সংগৃহীত
বাবা, সন্তানদের কাছে নির্ভরতার প্রতীক। বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা তার ভালোবাসা, ত্যাগ দিয়ে সন্তানের কাছে হয়ে ওঠেন ‘সুপার হিউম্যান’। তাই পৃথিবীর সকল বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’।
মরুভূমির মধ্যে চলতে গিয়ে যদি আপনি পথিমধ্যে গাছ খুঁজে পান, আপনার অনুভূতি কেমন হবে? নিশ্চয় এত বেশি ভালো যে ভাষায় প্রকাশ দুরূহ। আপনি তার ডানাগুলোর নিচে শীতল ছায়া উপভোগ করবেন। সেই গাছটি যদি আপনাকে মরুভূমিতে চলা সারাটি পথ ছায়া দেয়? তাহলে আপনি বুঝতেই পারবেন না রৌদ্রের উত্তপ্ততা। ঠিক এমনই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি গাছ আছে। যিনি পৃথিবীর এই দূষিত সব বিষয় থেকে আগলে রেখেছেন। তিনি হচ্ছেন বাবা। নীরবে যুদ্ধ করে যাওয়া ব্যক্তিটির নাম বাবা। আপনার নিরবচ্ছিন্ন সুখের পূর্ণতা যে এনে দেয় সেই তো বাবা। বাবাকে ভালোবাসার কথা কখনো মুখে বলা হয় নি। বলা হয় নি কতখানি ভালোবাসি। যার বাবা বেঁচে আছে, সে–ই তো ভাগ্যবান।
কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যখন বাবা একটু বৃদ্ধ হয়ে যায়। নিজেরা একটু বড় হই। বুঝতে শিখি দুনিয়াকে। তখনই ভুলে যাই মাথার ওপর ছায়া দিতে থাকা গাছটিকে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়ে যাই তার প্রতি। ভুলে যাই তার অতীত কর্মপ্রচেষ্টা। কত ত্যাগই না তিনি করেছেন আমাদের জন্য। নিজের সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য যে বাবা ব্যাকুল থাকতেন, সে না খেলে যিনি থাকতেন নির্ঘুম, সে না খেলে থাকতেন অনাহারে, অসুস্থ হলে ঠায় বসে থাকতেন শিয়রে। খাবার সময় নিজের প্লটে ছোট টুকরাটা নিয়ে আমাদের দিয়েছেন বড় টুকরা। ঈদের সময় নিজে নতুন জামা না কিনে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কিনেছেন। পুরাতন জামা গায়ে গিয়েছেন ঈদগাহে। কত কিছুই না করেছেন আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে। সন্তানের কোন আবদার রাখেননি অপূর্ণ।
কিন্তু হায়! যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে যায়, আমরা তাদের মূল্যায়ন করছি না। রেখে আসছি বৃদ্ধাশ্রম নামক মানবতার নিকৃষ্ট কারাগারে। বাংলাদেশের মাটিতেও রয়েছে মানবতার এই নিকৃষ্ট কারাগার। বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগে আছে ছয়টি বৃদ্ধাশ্রম। আরও বেসরকারি আছে কিছু। এগুলোকে বলা হচ্ছে অপ্রতুল। দিন দিন বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা। আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের বড় হওয়ার পেছনে তাঁদের ত্যাগের কথা। তাঁদের বিবেচনা করছি বিরক্তিকর পদার্থ বা বাড়তি ঝামেলা হিসেবে।
কিন্তু, আমরা গ্রামগঞ্জে প্রচলিত একটা প্রবাদবাক্য ভুলে যাই, ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা।’ তাঁরা বৃদ্ধ হলেও তাঁদের মূল্যায়ন কমা উচিত নয়। বাবা শব্দটি ছোট, শুনতেও ছোট, লিখতেও ছোট কিন্তু এর গুরুত্ব পৃথিবীর চেয়ে বিশাল। বাবাকে নিয়ে কোনো ইতিহাস লেখা হয়নি। আমি মনে করি লেখা উচিত।
বাবা’ এমন একজন, যার হাত ধরে হাঁটতে শেখা, পৃথিবীর কঠিন পথে চলতে শেখা। বাবা মানে অসীম স্নেহ, ভালোবাসা ও যত্ন, যার কাছে কোন আবদারই ফেলনা নয়। বাবা মানে এমনই একজন বন্ধু, এক বটবৃক্ষ, যার ছায়া তলে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সন্তানেরা জিরোতে পারে পরম নিশ্চিন্তে।
বাবাদের কথা উঠলেই মাথায় আসে শত ত্যাগ স্বীকার করা নিঃস্বার্থ এক মানুষের কথা। এতটুকুই কি বাবাদের পরিচয়? খেলার মাঠে ব্যথা পেলে উঠে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়া, অসুখ-বিসুখে মাথায় হাত বুলিয়ে নিদ্রাহীন রাত কাটানো মানুষটিকে আমরা ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারি আমাদের ছোট ছোট প্রচেষ্টায়, মমতাময় আচরণে।
বাবার জন্য ভালোবাসা
মা-বাবার কাছে সন্তানের যে ঋণ, তা কখনই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবু ভালোবাসার প্রতিদানে শুধু বাবাদের জন্য রয়েছে এক বিশেষ দিন – তা হল প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার, বাবা দিবস। বাবা দিবস প্রথমবার পালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই তারিখে। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সেই থেকে আজ অবধি বিশ্বের প্রতিটি অংশেই বাবা দিবস উদ্যাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী উদ্যাপিত এই দিনটার সকল পরিকল্পনা হয় বাবাদের ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে যায় বাবাদের সাথে সুন্দর সব মুহূর্তের ছবি আর গল্পে। অনেকেই কেক কাটেন, কিংবা পরিবারের সকলে মিলে খেতে যান নামী কোনো রেস্টুরেন্টে। এসবের মাঝে বাবা দিবসের উদ্যাপনের আরেকটি বিশেষ দিক থাকে বাবার জন্য বিশেষ কোনো উপহার।
ছোটবেলা থেকে যিনি শত আবদার পূরণে আমাদের হাজারও উপহার দিয়ে আসছেন, তার জন্য উপযুক্ত উপহার খুঁজে বের করার কাজটি অনেকের জন্যই কঠিন। কখনও জামাকাপড়, কখনও তার প্রিয় বই, আর কখনও তার পছন্দের গ্যাজেট – সময়ের সাথে সাথে উপহারের তালিকাও ছোট হয়ে আসে। আবার কর্মব্যস্ততার মাঝে উপহার নিয়ে লম্বা প্ল্যান করার কথা খেয়াল থাকেনা অনেকেরই।
প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে
কিন্তু বাবা দিবসে বাবাকে দারুণ কিছু উপহার না দিলে তো চলেই না।বাবা দিবসের বিকল্প উপহার হতে পারে চশমা, ফটো ফ্রেম, বাবার প্রিয় গানের সংগ্রহ, অথবা সুন্দর কোনো পেইন্টিং। সাথে একটু ফুলেল ভালোবাসা যোগ করতে চাইলে তাও পাচ্ছেন পুষ্প ক্রিয়েটিভ ও আমোর ফ্লাওয়ার শপের মত দোকানগুলোতে। আর গতানুগতিক গিফট আইটেমস এর বাইরে কোনো প্রিয় স্ন্যাক্স আইটেম, এমনকি বাবার প্রতিদিনের প্রয়োজনের ঔষধটিও চাইলে কেনা যায় এই প্ল্যাটফর্মে। পৃথিবীর সব সন্তানেরা বাবার জন্য কিছু করতে পারলে, আনন্দ পায় অনেক সেটা যদি খুব ছোট উপহারও হয়।
সন্তানদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি দিন, প্রতিটি অধ্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাবা। তাদের আদর্শে সন্তানেরা ভালো-মন্দ বুঝতে শেখে। পরবর্তীতে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখে বাবাদের শেখানো এই আদর্শ। আমাদের সব সময় সযত্নে আগলে রাখা এই মানুষটি আমাদের সবার জীবনের “সুপার-হিরো”, তাই তাদেরকে মুখে হাসি ফোটাতে আসছে বাবা দিবসে একটু বিশেষ চেষ্টা করা যেতেই পারে।
Mily