
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিক আন্তর্জাতিক সফরে অংশ নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তার সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাজ্য সফরটি বিভিন্ন মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। অনেকে এই সফরকে ইতিহাস গড়া সফর হিসেবে দেখছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও এই সফরের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনকে বর্তমান সময়ের জন্য ‘যুগান্তকারী’ বলা হয়েছে।
চার দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এই সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কূটনৈতিক মহলে এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনার ঢেউ।
প্রথম অর্জন: রাজা চার্লসের কাছ থেকে ‘হারমনি পুরস্কার’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সফরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ অর্জন ছিল ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয়ের কাছ থেকে ‘হারমনি পুরস্কার ২০২৫’ গ্রহণ। এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে শান্তি, স্থিতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে। সাথে ছিল রাজপরিবারের প্রধানের সঙ্গে ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।
দ্বিতীয় অর্জন: তারেক রহমানের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক
সফরের অন্যতম রাজনৈতিক প্রভাব ফেলেছে ড. ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক।প্রেস সচিব একে "ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য গেম ওভার মুহূর্ত" হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই সংলাপ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
তৃতীয় অর্জন: দুর্নীতিবিরোধী বড় পদক্ষেপ
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করে। এনসিএ এটিকে সংস্থাটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সম্পদ জব্দের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে। এই অর্জন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি কড়া বার্তা হিসেবে কাজ করেছে।
চতুর্থ অর্জন: সম্পদ পুনরুদ্ধারে কৌশলগত বৈঠক
সফরকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানসহ বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠক ছিল সম্পদ পুনরুদ্ধারের কৌশলগত দিক এবং পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে।
এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশেও কাজে লাগবে বলে মত দিয়েছেন প্রেস সচিব।
পঞ্চম অর্জন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন আশা
সফরের আরেকটি গুরুত্বপূ্র্ণ অংশ ছিল রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্যের সহায়তা আহ্বান। যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাবেলের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস মিয়ানমারে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসনে লন্ডনের সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন। জাতিসংঘের আসন্ন সম্মেলনে এই ইস্যুতে নতুন অগ্রগতি আশা করছেন কূটনীতিকরা।
সব মিলিয়ে এই সফরকে ঐতিহাসিক এবং ফলপ্রসূ হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। রাজনীতি, কূটনীতি এবং দুর্নীতিবিরোধী বার্তায় পরিপূর্ণ এ সফর দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। সব দলের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রেখে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে উজ্জ্বল করার এই প্রয়াস প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র।
আঁখি