
দৈনিক জনকণ্ঠ
পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট।
২০২০ সালের ১৭ আগস্ট আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শূন্যতা তৈরি হলো। আমার বাবা হাজী আইয়ুব আলী এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। তাঁর মৃত্যু আমার জীবনের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিল। চারপাশে মানুষ আছে, জীবন চলছে, কিন্তু বাবার শূন্যতা এক অমোচনীয় অন্ধকার তৈরি করে রেখেছে আমার ভেতর।
মামের মৃত্যু, বাবার অশেষ দোয়া
আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই। মায়ের মৃত্যু বাবাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিয়েছিল। সেই শোক বুকে চেপে বাবা আমাদের পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন ছায়র মতো। তাঁর চোখে মায়ের স্মৃতি ছিল অমলিন। প্রায়ই গভীর রাতে বাবাকে দেখেছি মায়ের জন্য অশ্রু ঝরিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। তিনি বলতেন—“তোমার মায়ের জন্য দোয়া করো, আল্লাহ যেন ওকে জান্নাত নসিব করেন।’’ বাবার এই ভালোবাসা আমাকে প্রকৃত সম্পর্কের গভীরতা শিখিয়েছে।
এক সৎ ব্যবসায়ীর গল্প
বাবা ছিলেন দক্ষ, পরিশ্রমী ও নীতিবান একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার ব্যস্ততা সত্ত্বেও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন অটল। বাবার মুখে শুনেছি জীবনের দুঃখ-সুখ, কষ্ট-সফলতার গল্প। তিনি বলতেন—“কষ্টের পরেই আসে সাফল্য। কষ্টকে ভয় পেয়ো না।” আজও সেই কথা আমার বুকে সাহস যোগায়।
ধর্মপ্রাণ জীবন: কুরআনের আলোয় যিনি বেঁচেছেন
আমার বাবা ছিলেন প্রকৃত ধার্মিক মানুষ। সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা কুরআন তেলাওয়াত করা ছিল তাঁর নিত্য অভ্যাস। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হয়, কীভাবে ইমানি জীবনে চলতে হয়। বাবার ধর্মপ্রাণতা ছিল আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
অসুস্থ বাবার সেবায় ছিলাম, শিখেছি জীবনের শিক্ষা
বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন আমি তাঁর ছায়ার মতো পাশে থেকেছি। ঢাকার হাসপাতালে তাঁর সেবা দিনরাত অতিবাহিত করেছি। সেই সময় তিনি আমাকে জীবনের অনেক মূল্যবান কথা শোনাতেন সততা, ধৈর্য, মানুষের উপকার করার শিক্ষা। তাঁর শেষ দিনগুলোতে তাঁর প্রতিটি কথা আমার জীবনের পথনির্দেশ হয়ে গেছে।
আজ বাবার শূন্যতা তাড়া করে বেড়ায়
আজ আমি অসহায়, অর্থসংকটে জর্জরিত। জীবনের পথ বড়ো কঠিন মনে হয়। কিন্তু বাবার শেখানো শিক্ষা, তাঁর আদর্শ, তাঁর বিশ্বাস আমাকে ভেঙে পড়তে দেয় না। বাবার মুখে শোনা সেই কথা আজও বুকের গভীরে বাজে—“আল্লাহ ভরসা করলে মানুষ কখনো একা থাকে না।”
বাবার জন্য প্রার্থনা
এই বাবা দিবসে আমার একটাই প্রার্থনা—আল্লাহ যেন আমার প্রিয় বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা। হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।
আমার এই লেখা বাবার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমার প্রয়াস থাকবে, বাবার দেখানো পথে চলেই তাঁর নাম উজ্জ্বল করতে। কারণ বাবা তো আর নেই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা, তাঁর আদর্শ আর তাঁর ভালোবাসা আমার জীবনের চিরন্তন শক্তি হয়ে থাকবে।
বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি
হ্যাপী