
সংগৃহীত
“বাবা” শব্দটি ছোট হলেও, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে অসীম ভালোবাসা, ত্যাগ, দায়িত্ব ও এক নিরন্তর সংগ্রামের কাহিনি।
বাবাই আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড-দৃঢ়, নীরব, অথচ অদৃশ্য শক্তির এক বিশাল প্রতিমূর্তি।
আমার বাবার নাম মো. জয়নুল আবেদীন । একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু আমাদের জীবনে তিনি অসাধারণ। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কাজের প্রস্তুতি নেন।
কখনো ব্যবসা চালানো, কখনো মাঠে শ্রমিকের কাজ-যেটাই হোক, মুখে কখনো অনুযোগ নেই। আমাদের পড়ালেখা, চিকিৎসা, সংসারের বাজার-সব কিছুতেই তাঁর নীরব ব্যস্ততা। নিজের জন্য কোনো কিছু কেনেন না, কিন্তু আমাদের চাহিদা যেন তাঁর কাছে নিয়ম।
আমরা তিন ভাই-বোন। মা একজন গৃহিণী। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় বাবাকে, কিন্তু তিনি তা বুঝতে দেন না। অনেক রাত অবধি না খেয়ে থাকেন, কারণ আমাদের পেটে যেন ভাত থাকে। এই নিঃশব্দ সংগ্রামই তাকে আমার চোখে একজন মহানায়ক করে তুলেছে।
আমি স্পষ্ট মনে করি-পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তির টাকা পেয়ে খুশিতে বাবা চোখে পানি এনে বলেছিলেন, “তুই বড় হ, আমার তো কোনো পড়ালেখা ছিল না।” সে রাতে তিনি নিজে খেয়ে ছিলেন কি না, আজও জানি না। এক ঈদের সময় নিজের জন্য একটা পুরোনো পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে বলেছিলেন, “নতুন জুতা তোকে ভালো মানাবে রে।” এমন আত্মত্যাগ কেবল বাবার পক্ষেই সম্ভব।
আজকের সমাজে মা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, যা অবশ্যই প্রাপ্য। তবে বাবাদের অবদান কখনো কখনো আড়ালে পড়ে যায়। অথচ পরিবার পরিচালনায় বাবার স্নেহ, শাসন ও আর্থিক জোগান-সবই হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের ভিত্তি। বাবার মুখে হাসি না থাকলেও, তাঁর হৃদয়ে থাকে পরিবারের স্বপ্ন।
আমার বাবা কোনো চলচ্চিত্রের নায়ক নন, কিন্তু তিনি বাস্তব জীবনের এক সাহসিক সৈনিক। তাঁর পরিশ্রমে আমাদের স্বপ্ন বেঁচে থাকে। তাঁর মাথার যে বাড়ি তৈরি হয়, তাঁর নিঃশ্বাসে আমরা নিরাপদ বোধ করি।
আজ বাবা দিবসে আমি বলতে চাই-আমার বাবা শুধু পরিবারের একজন সদস্য নন, তিনি আমাদের জীবনের ভিত্তি, ছায়া, শক্তি। তাঁর মতো মানুষদের গল্প জানাতে হবে, শুনাতে হবে-কারণ প্রতিটি বাবার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক একটি অমর মহাকাব্য।
বাবা, আপনি আমাদের মেরুদণ্ড-আপনার ছায়ায়ই আমরা মানুষ হচ্ছি।
হ্যাপী