ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৪ জুন ২০২৫

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক

লন্ডনে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি প্রত্যাশিতই ছিল। নির্বাচনমুখী গণতন্ত্রকামী মানুষ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের স্বপ্ন দেখছে। অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্তের অভিযাত্রা প্রত্যাশিত গন্তব্য পাক, এমনটিই চায় শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাই ব্যবধান, সংশয়, সংকট, এ জাতীয় সব নেতিবাচকতাকে পেছনে ঠেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের খোলাখুলি বৈঠকটি ছিল কাক্সিক্ষত। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি জাতির জন্য স্বস্তির। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা  বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে দুই পক্ষের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারেক রহমানের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠক সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সবই যে একটা অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থাকে কাটিয়ে জাতিকে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুই নেতা। বিগত কয়েক মাস যাবৎ বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে আসছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বশেষ বৈঠকেও কয়েকটি ছাড়া সবাই ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিল। কিন্তু ঈদুল আজহার আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনোদিন নির্বাচন হবে। এটা সত্যি যে, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যেও বিভক্তি ছিল। কিন্তু দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল, সেই ঘোষণায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হলো ডিসেম্বর-এপ্রিলের বিতর্ক। এ অবস্থায় সরকার একটি সম্মানজনক আপোসরফা চেয়েছিল, যার প্রতিফলন ঘটতে দেখা গেল লন্ডন বৈঠকে।
এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, লন্ডন বৈঠকের আগের বাস্তবতায় কবে নির্বাচন হবে কিংবা ঘোষিত সময়ের ভেতরে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা এ নিয়ে জনমনে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অপশক্তি এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালায়। লন্ডন বৈঠক সুসম্পন্ন এবং যৌথ বিবৃতির কারণে জাতি সুস্পষ্ট ইতিবাচক বার্তা পেল। ফলে আশা করা যায়, সামনের দিনগুলোয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর জড়িয়ে থাকা সব ধরনের কালো ছায়া অপসৃত হবে এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা সাপেক্ষে দেশে চমৎকার নির্বাচনী পরিবেশ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যক্ষ করা যাবে।  এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

প্যানেল

×