ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সর্বজনীন পেনশন

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১০ জুন ২০২৫

সর্বজনীন পেনশন

সম্পাদকীয়

২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় পেনশন কর্মসূচি চালু হয়। প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা- এই চার কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮২ জন গ্রাহক হয়েছেন। তারা চাঁদা দিয়েছেন ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে গত বছর জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টি কিছুটা অনিশ্চয়তাসহ প্রায় ধামাচাপা পড়ে যায়। ফলে গ্রাহকরাও কিছুটা দ্বিধাসংকটে পড়ে যান। তবে সম্প্রতি এর অবসান ঘটেছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সর্বজনীন পেনশন বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অর্থ সচিবের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের বিভাগের সচিব। 
কর্মশালায় বলা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা যুক্ত। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া চাঁদা সরকার বিনিয়োগ করছে লাভজনক খাতে। বিনিয়োগের মুনাফা বাড়লে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের পেনশনও বাড়বে। এমন ৮ সুবিধার কারণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার। অন্যান্য সুবিধা হলো পেনশনের আওতায় পাওয়া যাবে সামাজিক সুরক্ষা। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে এই কর্মসূচির সুবিধা ইত্যাদি মাসিক ভিত্তিতে চাঁদার বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ মূল্য হিসেবে সুযোগ এবং কত টাকা চাঁদা দিলে কত টাকা পাওয়া যাবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। 
তবে এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও সফল করতে অন্তত ১০ ধরনের চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এগুলোর অন্যতম পেনশন কর্মসূচির আওতায় এলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে তা সম্ভাব্য গ্রাহকদের জানানো। সমতা কর্মসূচির সুবিধা নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জ। প্রগতি কর্মসূচিতে প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। প্রবাস কর্মসূচিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা। এসব কাজ করার জন্য দক্ষ পেশাগত ও পেশাগত জনবল নিয়োগ, সর্বোপরি নিরাপত্তার বিষয়টি। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ পেনশন কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে মেলার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে খুব শীঘ্রই মাঠ পর্যায়ে তাগিদ দেওয়া হতে পারে। 
দেশের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি হিসেবে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এবার সরকার চালু করেছে সবার জন্য পেনশন। ইতোমধ্যে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭২ বছর। ফলে দেশে প্রবীণ তথা নির্ভরশীল জনসংখ্যা বাড়ছে। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তথা বাবা-মা-ই সন্তানের ওপর নির্ভরশীল, যাদের আয়-উপার্জন কম। সে অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে প্রভূত সহায়ক হবে বয়োবৃদ্ধদের। পাশাপাশি সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমাও চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা দেশে চিকিৎসা ব্যয়সহ ওষুধপত্রের দাম বাড়ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এই সুফল সরকার সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নানাভাবে সম্প্রসারণ করেছে ও করছে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু ও জনপ্রিয় হলে দেশের জনগণ সত্যিকারে এর সুফল ভোগ করবে।

×