
ছবিঃ লেখকের সৌজন্যে
শৈলানের জিয়ারত আলী বিশেষ এক ধরনের ব্যাঙ পুড়িয়ে এন্টিবায়োটিক তৈরি করতে পারতেন। ১৯৬০ সালের দিকে আমার বাম হাতে বসন্তের টিকা থেকে একটা ভীষণ মারাত্মক ঘা হয়েছিল। ৩-৪ মাস ধরে ডাক্তাররা চিকিৎসা করে কিছুই করতে পারল না। কোন কোন ডাক্তারের মতামত হলো ঘা হাড় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, এখন হাতটাই কেটে ফেলতে হবে। এই অবস্থায় নদীর ঘাটে জিয়ারত আলী আমার হাতে ঘা দেখেছিলেন।
উনি ফজল ভাইকে দিয়ে আমার বাবাকে জানালেন যে তিনি একটা ওষুধ বানাতে জানেন যা দিয়ে ওই ঘা সারানো যেতে পারে। এদিকে আমার চিৎকারে পাড়ার লোকজন ঘুমোতে পারে না। অবশেষে জিয়ারত আলী এই ব্যাঙ পুড়িয়ে কালো এক রকমের পাউডার বানিয়ে আমার হাতে সেই ঘা এর মধ্যে দিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই ঘা শুকিয়ে গেল। বিষ বেদনা সব চলে গেল আর সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। আমি তো তখন এন্টিবায়োটিক কি জিনিস তা জানি না।
এই ঘটনার কুড়ি বছর পর আমি টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এন্টিবায়োটিক এর উপর গবেষণা করি। তখন আমি বুঝতে পারলাম জিয়ারত আলী নিশ্চয়ই ব্যাং থেকে এন্টিবায়োটিক বানায়। এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন সারায়। জিয়ারত আলী জানতেন না তিনি এন্টিবায়োটিক তৈরি করেন। এন্টিবায়োটিক কি জিনিস সেটা তার জানার কথা নয়। তবে তিনি বিজ্ঞানী হলে অবশ্যই নোবেল প্রাইজ পাইতেন। কারণ ব্যাং থেকে তার আগে পৃথিবীর কেউ এন্টিবায়োটিক তৈরি করেননি। তিনি বিজ্ঞানী হলে, তার আবিষ্কৃত ওই এন্টিবায়োটিক টি কোন কেমিক্যাল এবং কি তার গঠন সবই তিনি জানতেন এবং কেমন করে ওটি ইনফেকশন সারিয়ে ফেলে তার পদ্ধতি তিনি লিখতে পারতেন।
লন্ডনে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং প্রথম পেনিসিলিন এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন এবং কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করেন। মানুষ যুদ্ধ করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলেই ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হত এবং তার থেকে অনিবার্য মৃত্যু। পেনিসিলিন আবিষ্কার হওয়ার পর এই ইনফেকশন আর মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়নি। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং তার এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৪৫ সালে নোবেল প্রাইজ পান।
১৯৯৬ সালে একদল বিজ্ঞানী আমেরিকাতে ব্যাঙ থেকে এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন এবং এটা একটা ন্যাশনাল নিউজ ছিল। আমি যখন এই খবরটা দেখলাম তখন আমার জিয়ারত আলিকে খুব মনে পড়েছিল। এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফ্রান্সের বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে জীবজন্তু মরে যায় তা প্রকাশ করেন।
ড. দলিলুর রহমান: লেখক আমেরিকায় কর্মরত একজন বিজ্ঞানী
সাব্বির