
বিশ্বের এক নীরব মহামারির নাম ‘তামাক’। তামাক ছাড়া আর এত বড় দ্বিতীয় কোনো কারণ নেই, যা বছরে সারা বিশ্বে ৮৭ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। আমাদের দেশেও তামাকের ভয়াবহতা উদ্বেগজনক, প্রতিদিন ৪৪৫ জন মানুষ মারা যায় তামাকের কারণে সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে! অথচ এ বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা বা খবর নেই। অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে নেই যথেষ্ট প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা। সর্বগ্রাসী তামাকের ভয়াবহতা রুখে দিতে ১৯৮৭ সাল থেকে ৩১ মে দিনটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোর উদ্যোগে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেও তামাকমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে। জনসাধারণের মাঝে তামাকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি এবং তামাকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনটি জোরদারকরণে দিবসটির ভূমিকা অগ্রগণ্য। এক সময় বেসরকারি উদ্যোগে পালন করা হলেও এখন তামাকমুক্ত দিবসটি উদযাপনে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা/দপ্তরগুলোর সমন্বয়ে এ বছরও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘Unmasking the Appeal: Exposing Industry Tactics on Tobacco and Nicotine Products’ বাংলা ভাবানুবাদ- “তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি”। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। কারণ মুনাফালোভী ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো নানাবিধ অপকৌশলে তাদের মৃত্যুপণ্যের ব্যবসা সম্প্রসারণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি তামাক কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রীয় আইন, বিধিমালা, নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছে না! তাদের প্রধান টার্গেট আমাদের সন্তান! শিশু-কিশোর ও তরুণদের অর্থাৎ- আগামী প্রজন্মকে তারা নেশার ফাঁদে ফেলে মুনাফার পাহাড় গড়ার নেশায় আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে এবং সেটা ঠিক এমন সময়ে, যখন বাংলাদেশ ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ এর সুফল পেতে চলেছে। তামাক কোম্পানি সেটা তাদের অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদগ্রীব হয়ে আছে! বর্তমানে আমাদের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশকে ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। বিতর্ক থাকতে পারে, তবে কিশোর-তরুণরাই এখন দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। তারাই উদ্যোক্তা, পথপ্রদর্শক। তাদের উদ্যমতা, অসীম সাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্তস্নাত সংগ্রাম ইতিহাস হয়ে উঠেছে। এখন নব উদয়ের পথে তারা রাজপথ কাঁপিয়ে শুদ্ধ রাজনীতির চর্চা মোদ্দাকথা- সবকিছুতেই তরুণরাই মুখ্য। নেতৃত্বের ঝাণ্ডা তরুণরাই বয়ে চলেছে, ইস্পাত কঠিন শক্ত হাতে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এজন্যই বলে গেছেন ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়! তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ তরুণরা অকুতোভয়, তারাই আগামীর অগ্রসৈনিক। তরুণদের কাজী নজরুল এর ভাষায় বলতে হয়- “শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।” তরুণদের নিয়ে যত আশার বাণী, যত সম্ভাবনার গান প্রথিতযশা গুণী মানুষরা শুনিয়েছেন, তা এখনো আমাদের আন্দোলিত করে। এজন্যই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বাঙালি জাতির মুক্তি, স্বাধীনতার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের তরে বর্তমান প্রজন্ম যা করেছে, তা আমাদের আশান্বিত করে। ভয়ও পাই কারণ, বর্তমান সময়ের কিশোর-তরুণরা কোন পথে ধাবমান তা নিয়ে সন্দিহান হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে! নেশার ফাঁদে পড়ে উগ্রতা ও অপরাধপ্রবণতার ঊর্ধ্বগতি হতাশ বাড়ায়। এভাবে চলতে পারে না। এদের বিপথে যাওয়ার জন্য দায়ী বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। দায় রয়েছে সমাজের, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রশাসন যন্ত্রের। জনপ্রতিনিধি, সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে যারা সমাজে পরিচিত, তারাও নেতিবাচকতায় অনেক বড় ভূমিকা রেখেই চলেছেন। অল্প বয়সেই ছেলে-মেয়েরা কৌতূহলবশত অথবা প্ররোচনায় ধূমপান ও ভয়াবহ মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে। ধূমপান, মাদকের নেশায় একবার কেউ আসক্ত হলে ফেরানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনৈতিকভাবে ঠিক এই সুযোগেরই অপব্যবহার করছে তামাক কোম্পানিগুলো। নিত্য নতুন কৌশলে আমাদের সন্তানদের নেশার জালে আটকাতে মরিয়া হয়ে প্রচারণা, প্রলুব্ধ করছে। ইদানীং দেখা যায়, কিশোর-তরুণদের যাতায়াত বেশি এমন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ তৈরি করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। যেখানে ধূমপান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদকও সেবন করা হয়। স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থান ও আশপাশে সিগারেটের দোকান, ভ্রাম্যমাণ দোকান বেশি। সিগারেট ও সেগুলোর কৌশলী বিজ্ঞাপন সব বাচ্চাদের চোখ সমান্তরালে প্রদর্শন করা হচ্ছে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ। স্থানীয় সরকার বিভাগের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় কেন্দ্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও তামাক কোম্পানি ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার হিংস্র নেশায় আমাদের শিশু-কিশোর, তরুণদেরই বলির পাঠা বানাচ্ছে। ফলে কিশোর-তরুণ পথভ্রষ্ট হয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সামাজিক অপরাধ, বেকারত্বের হার বাড়ছে। ‘কিশোর গ্যাং’ অপসংস্কৃতির উদ্ভব ঘটছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান, তামাক সেবন করে। শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এই বদ অভ্যাস রয়েছে, যা অত্যন্ত মারাত্মক ও অশনিসংকেত! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত ‘Global School Based Student Health Survey-2014’ গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে তামাক ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বে এই সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০২১)! শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ধূমপানের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। খেয়াল করবেন, স্কুল-কলেজের শিশু, কিশোরদের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ভয়-ডরহীনভাবে হিরোদের মতো প্রকাশ্যে সিগারেট ও ফ্যাশন হিসেবে ই-সিসারেট সেবন করতে দেখা যায়। তাদের বয়সে আমরা বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মানে ধূমপান তো দূরের কথা, জোরে কথাও বলতে বারণ ছিল! সুতরাং সচেতনতা বাড়ানো ও আইন বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের আরও সক্রিয় হতে হবে। বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার তরুণদের বিপথগামী করছে। এখানে বিনোদন মাধ্যমের কথা বলতেই হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক এবং ওয়েবসিরিজে নায়ক, নায়িকা ও ভিলেন দ্বারা অবাধে ধূমপান, মাদক, অ্যালকোহল সেবনের দৃশ্য ফোকাস করে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। মানস এর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ‘বরবাদ’ এ ১২১ বার ধূমপানের দৃশ্য ছিল যার মধ্যে নায়কে ৮৩টি দৃশ্যে ধূমপান করতে দেখা গেছে। ১৯ বার নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য সেবনের দৃশ্য ছিল। উপরন্তু ভাষা, ভিনদেশী সংস্কৃতির মিশেল, খুন-হত্যার দৃশ্যে উগ্রতা এবং সতর্কতা না দেয়া বিষয়গুলো যে কোনো সচেতন মানুষকে ভাবাতে বাধ্য। আরেকটি চলচ্চিত্র ‘জংলি’তেও ৫৭ বার ধূমপানের দৃশ্য ছিল। ‘কাহিনীর প্রয়োজন’ নাম করে এগুলো তামাক কোম্পানির লালসা চরিতার্থের ‘হিডেন এজেন্ডা’ হিসেবে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। আরও যুক্ত হয়েছে হালের ওয়েবসিরিজ। এগুলোর কন্টেন্ট এ ধূমপান, মাদক, ভাষার অপব্যবহার যেন কোনো ব্যাপরই নয়! শিশু, কিশোর-তরুণরা অনুসরণ ও অনুকরণ প্রিয়। বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গন চলচ্চিত্র। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট শিল্পী, প্রযোজক পরিচালকরা এমন কিছু করতে পারেন না, যা সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে। উদ্বেগের বিষয় হলো তামাক কোম্পানিগুলোর অপ্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। নিরাপদ মনে করে অনেকে ই-সিগারেটের দিকে ঝুঁকছে। গ্রামাঞ্চলেও ই-সিগারেট বিপণন, ব্যবহার বাড়ছে। কারণ ই-সিগারেট পণ্যগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ফ্লেভার ব্যবহার করে থাকে, যা তরুণ ও উঠতি বয়সীদের আকর্ষণের মূল কারণ। ফ্যাশন হিসেবেও নিয়ে উঠতি বয়সীদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহার বাড়ছে। ই-সিগারেটকে ‘ধূমপান ত্যাগে সহায়ক’ বলে অপপ্রচার চালানোর কারণে অনেকে প্রচলিত সিগারেটের বিকল্প ভাবছেন! আবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সেগুলো বেচা-কেনা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। নাটক-সিনেমায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় তারকাদের দ্বারা সেগুলোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রকৃত সত্য হলো, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০গুণ বেশি ক্ষতিকর! ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ এর শিকার হতে পারেন। ক্ষতিকর বিবেচনায় নিয়ে ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে এক সাক্ষাতের সময় বিষয়টি উপস্থাপন করি। আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশে এ ই-সিগারেট (ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম) আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং আগামী প্রজন্মের প্রতিনিধিদের তামাকের নতুন মরণফাঁদ থেকে রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘমেয়াদের এর সুফল আমরা নিশ্চয়ই পাব। তবে ই-সিগারেট নামক নতুন এই আপদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। শিশু, কিশোর তরুণদের নিকোটিনের ফাঁদ থেকে বাঁচাতে হবে। ‘মানস’ নামক সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যমের সহায়তায় ধূমপানবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত আছি দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করছি, যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিকভাবে নিজেদের ক্ষতিকর কু-অভ্যাসগুলো থেকে দুরে রাখতে পারে। সরকারের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোও চেষ্টা করছে। একসময় তরুণরা কর্মক্ষমতা হারাবে। এই বিপুল জনগণকে সুস্থ রাখতে হলে তরুণ বয়সে নানাবিধ কু-অভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। দেশে অসংক্রামক রোগের আগ্রাসন বাড়ছে। বর্তমানে ৬৭ শতাংশ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে। রোগ-ব্যাধি ও সেগুলোর চিকিৎসায় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সামগ্রিক উন্নয়নও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদে পদক্ষেপ হিসেবে তরুণদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। তারুণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে তাদের সার্বিক সম্পৃক্ততা ও সুফল নিশ্চিত করতে হবে যেন, বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের সন্তানদের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস না পায়। কারণ দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ মাদকাসক্ত রয়েছে যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ তরুণ-কিশোর। এই সংখ্যা আরও বাড়ুক, আমরা চাই না। আমাদের এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ৭ হাজারের বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক আছে। এর মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সুতরাং তামাকের পরোক্ষ ক্ষতি থেকেও অধূমপায়ী বিশেষ করে শিশু, নারীদের রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশে ১৫ বছরের কমবয়সী শিশুর মধ্যে ৪ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিশু তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৬১ হাজারের অধিক শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। পরোক্ষ ধূমপানে বাংলাদেশে প্রায় ২৬ হাজার অধূমপায়ী মারা যায়, এদের অধিকাংশ শিশু ও নারী! সুতরাং তামাকের বিষাক্ত ছোবল থেকে নিজেকে রক্ষা করুন এবং প্রিয়জনদের ও আপনার আশপাশে সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু, ১২ লাখ মানুষ অসুস্থতা ও ৪ লাখ মানুষের পঙ্গুত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই পারে তামাকমুক্ত সমাজ ও তামাকমুক্ত দেশ গড়তে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের আহ্বান সফল হোক।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দ সৈনিক
[email protected]
প্যানেল