ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২২ আগস্ট ২০২৪

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

সম্পাদকীয়

ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী ঘেরা নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এসব নদ-নদী নানাভাবে তাদের অকৃপণ দানে দেশের মাটি ও মানুষকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি প্রকৃতির নিয়মে কখনো কখনো দেখিয়েছে ভয়ঙ্কর রূপ। সম্প্রতি ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের আট জেলাÑ ফেনী, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি হয়েছে বন্যাকবলিত। ফেনি শহর তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ লাখ এবং নোয়াখালীতে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় যানজটে নাকাল হচ্ছেন রাজধানীবাসীও। বন্যা দেশের আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও রয়েছে। ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার  নদীসমূহের পানি কতিপয় পয়েন্টে সময়বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। উল্লেখ্য, দেশের মানুষ এর আগেও কয়েকবার ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৬৬, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৭, ২০২২ সালে। এসব বন্যা বাংলাদেশে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করেছে পানি। কয়েক জায়গায় ব্রিজ ভেঙে পড়েছে, সড়ক ও রেলপথে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। এসব কারণে বন্যাকবলিত  এলাকার মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ইতোমধ্যে জেলার জেলা প্রশাসক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।

সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজের জন্য নগদ বরাদ্দ, চাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলার গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে। 
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোধ করা যায় না। তবে উপযুক্ত পূর্বপ্রস্তুতি এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এসব দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন না হয়ে সকলের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলায় চাই দুর্যোগের প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান।

আইপিসিসি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা যদি দুর্যোগ মোকাবিলায় সফল না হতে পারি, তাহলে নিরাপদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত-সমৃদ্ধ বদ্বীপ গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠবে। মানুষ বাঁচাতে হবে আগে। তাই সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে সরকারের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজেরও কর্তব্য রয়েছে।

×