ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

আমন উৎপাদন ও মৌসুমি সংকট

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১১ আগস্ট ২০২৪

আমন উৎপাদন ও মৌসুমি সংকট

.

চলছে শ্রাবণ মাস এবং কৃষক এখন ব্যস্ত আমন ধান চাষেগত জুলাইয়ের প্রথম দিকে বন্যায় প্লাবিত হয় দেশের  কিছু অঞ্চলটানা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিযার প্রভাব পড়েছে আমন চাষেযার কারণে বিলম্বিত হতে পারে ধান কাটা মাড়াইয়েদেশে মোট চাল উপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমেগত আমন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)এ বছর রোপা আমন ধানের আবাদ ও উপাদন বাড়াতে ৪০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়ার কথাকৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, দেশের ৬১টি জেলার ৫ লাখ ৬৬ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এই প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে বীজ ও সার পাবেন

প্রণোদনার আওতায় একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য রোপা আমন ধানের উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের প্রয়োজনীয় ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনা মূল্যে পাবেনসাম্প্রতিক সময়ে এক লাখ টন সার আমদানির কথা শুনছিলামআগামীর নয়, আজকের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আমন চাষিদের সার, জ্বালানি নিশ্চিত করাকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতেই আমরা যেন কৃষকের কথা ভুলে না যাইতাদের প্রয়োজনটুকু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেটাতে হবেসময়টা বড় অনিশ্চিত আর টালমাটালএকটা স্বাধীন দেশ রক্তাক্ত হবে, এটা কখনোই কাম্য নয়বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরীহ পেশা কৃষিখাদ্য উপাদনের মতো চরম রাজনৈতিক বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও পক্ষহীন অরাজনৈতিক সাধারণ জীবন যাপন করেন বাংলাদেশের কৃষকতাদের কোনো দল নেই, নেই কোনো দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর নেতা, সংগঠন বা প্ল্যাটফর্মকৃষক শুধু বোঝেন মাটির ভাষা, তার জীবনের সব যুদ্ধ শুধু ফসলের মাঠেসেই কৃষককে তার সময়ের প্রয়োজনটুকু মেটাতে হবে, না হলে আমাদের অনেকেরই না খেয়ে থাকতে হবে

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আমন ধানের ফলনের ওপর একটি প্রতিদেন প্রকাশ করেছে এবং এতে বলা হয়েছে, বিগত পাঁচ বছরের আমন মৌসুমের আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট উপাদান এবং ফলনের ওপর এগুলোর প্রভাবের গাণিতিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ব্রি বলছে, এ বছর আমনের ফলন হবে হেক্টরপ্রতি পৌনে তিন টনের বেশিবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এটিই গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ ফলনএ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলন হয়েছিল গত (২০২১-২২ সালে)ওই সময়ে দেশে আমন মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ফলনের হার ছিল ২. ৬১৫ টন এবং  এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে এ হার ছিল প্রায় ২. ৫৭ টন। 

প্রতিবেদনে আরও  বলা  হয়, আমনের ভালো ফলনের জন্য পরিষ্কার সূর্যালোক, অধিক সৌরবিকিরণ, অধিক গড় তাপমাত্রা, কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং মেঘমুক্ত আকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেভালো ফলনের জন্য উপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে পরিমাণ সূর্যালোক প্রয়োজন পড়ে, এবার তা পাওয়া গেছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিধানের কুশি গঠনের জন্য এবারের তাপমাত্রা ছিল সর্বোত্তমফলে, প্রজনন পর্যায়ে ভালো ফুল ফুটেছেআবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রজনন পর্যায়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার পাশাপাশি আপেক্ষিক আর্দ্রতা ভালো হওয়ার বিষয়টি ফুল ফোটা ও পরাগায়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রোপা আমনের জন্য ৫৬ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলতবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে এবার ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছেএসব জমিতে উপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টনআবার বোনা আমনে ২ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়এসব জমিতে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়সে হিসেবে ৫৯ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে এবার  আবাদ করা হয়মোট উপাদন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টনএ কথা সত্য, চাষিদের জন্য সরকার কয়েক ডজন প্রকল্প তৈরি করেছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে এবং  কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, সহজ শর্তে ঋণ, সহায়ক মূল্যে ফসল কিনে নেওয়াসহ কৃষি প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সরকার যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েএই বাস্তবতার নিরিখে বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাত মিলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি  টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশএর মধ্যে শস্য কৃষি খাতের জন্য রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।  বাকি ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ মস্য ও প্রাণিসম্পদ, বন ও পরিবেশ, ভূমি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, যা  অপ্রতুলগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের বরাদ্দ ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকাঅর্থা, ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে গেছেশতকরা হিসাবে দেখা যায় যে, অনুন্নয়ন বাজেটের ২.৬ শতাংশ এবং উন্নয়ন বাজেটের ৫.৭ শতাংশ কৃষিতে বরাদ্দ  করা হয়েছেবিগত ৪ বছরের মধ্যে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কম, যা মোট বাজেটের ৩.৪০ শতাংশ

বর্তমান বাজেটের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কৃষি ভর্তুকি, যা আলোচনার মুখ্য বিষয়চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নয়া বাজেটে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, যা গত বছরের মূল বাজেট থেকে ২৭২ কোটি টাকা কমগত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফসল খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকাএর সঙ্গে ৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা যোগ করে সংশোধিত বাজেটে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকাসংশোধিত বাজেট থেকে তা ৮ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা কমআন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ও কৃষি যন্ত্রের দাম বাড়ার কারণে উপাদন খরচ বাড়বেসেক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস ঠিক নয়এতে বাধাগ্রস্ত হবে কৃষির উপাদনব্যাহত হবে খাদ্যনিরাপত্তাবন, জার্মানি থেকে প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির খাদ্যনিরাপত্তাহীন ১০টি দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে রেখেছেবিবিএসের তথ্যানুসারে, দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার অভাব রয়েছে

বর্তমান বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে গত  অর্থমন্ত্রী কৃষি উপাদন ব্যয়  হ্রাস এবং অন্যান্য উপায়ে কৃষককে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গৃহীত কিছু বাস্তবমুখী প্রদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছিলেনযেমন- কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক হার শূন্য রাখা, চাল আমদানির ওপর শুল্ক হার বহাল রাখা, গ্রিন হাউস প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত কৃষি উপকরণের ওপর শুল্ক হার কমানো, কৃষিজাত দ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে  ৩০ শতাংশ  নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত বিদ্যু বিলের ওপর ২০ শতাংশ হারে ছাড় অব্যাহত রাখা, কৃষি গবেষণার মাধ্যমে উন্নত ফসলের জাত ও বীজ উদ্ভাবন, নারীদের জন্য পৃথক সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা, মাঠ পর্যায়ে কৃষি ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপনবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সেবা সাহায্য, সহযোগিতা ও ভর্তুকি সরাসরি উদ্দিষ্ট কৃষক ও প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছানোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, যা উপাদন বান্ধব ও পরিবেশ উপযোগী বলে বিবেচিতএখানে উল্লেখ্য, কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবা সহায়তা প্রদান (প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষ) প্রতিটি গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেই অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে স্থান পায় এবং এটি একটি অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এখনো বিবেচিতকিন্তু কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি বাজেটে অনেককিছু উল্লেখ নেইযেমন- সেচ কাজে ডিজেল ব্যবহারের ওপর আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নিকৃষি গবেষণা খাতে তেমন কোনো বরাদ্দ পরিলক্ষিত হয়নিবাজেটে আমদানিনির্ভর নীতিকে প্রাধান্য দেওয়ায় কৃষি খাতের ভর্তুকির টাকা সার আমদনিতে চলে যাবে বিধায় বাজেট ছাড়া কিভাবে গবেষণা হবে? দেশের ৪৫ শতাংশ কৃষিজীবী মানুষের জন্য বরাদ্দ মাত্র মোট বাজেটের ৩.৪ শতাংশ, যা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপ্রতুল

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে টার্গেট গ্রুপ ঠিক করে কৃষিতে ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে, যার জন্য কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজনকৃষি ক্ষেত্রে উপাদিত পণ্যের নায্য দাম কৃষককে নিশ্চিত করতে পারলে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না আগামীতেদেশে বর্তমানে ভর্তুকি প্রদান করা হয় পণ্যের মাধ্যমে, যা অনায়াসে নগদে প্রদান করার ব্যবস্থা করা যায় ১০ টাকা মূল্যের ব্যাংক হিসাবের  মাধ্যমেআবার কৃষি শক্তি হিসেবে যন্ত্রের ব্যবহার বর্তমানে গ্রামে খুবই জনপ্রিয়কিন্তু নগদ অর্থায়নের স্বল্পতার কারণে তা কৃষকের ক্রয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বিধায় ভর্তুকি সুবিধা কৃষকের জন্য সহায়ক হতে পারেবর্তমানে দাম বেশি হওয়ায় কীট ও বালাইনাশকে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারেআবার  দেশীয় বীজের প্রতি কৃষকের অনেক আগ্রহ থাকায় এক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা বাড়ানো যেতে পারেবাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ এবং যে কোনো দুর্যোগের অব্যবহিত পরে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করার জন্য কৃষি দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল গঠন করা হয়েছে কৃষি নীতিতেযার বাজেট বরাদ্দ এবার থেকে শুরু করা যেতে পারেক্ষতিগ্রস্ত হাওড় অঞ্চলের জন্য আলাদা বাজেট হওয়াও সময়ের দাবি

এতটা  সত্ত্বেও চাষিদের একটা বড় অংশই চাষ ছেড়ে দিতে পারলে যেন বেঁচে যানআজ প্রযুক্তির বহু উন্নতি হয়েছে, চাষির কাছে নানা প্রযুক্তি ও সুবিধা সরকার পৌঁছে দিয়েছেকিন্তু চাষিকে আত্মনির্ভর হতে দেওয়া হয়নিতার কারণপ্রাকৃতিক  কারণে কৃষি ও কৃষক বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে, যার প্রমাণ এবারকার  আমন  ফসলে বৃষ্টির আক্রমণ যা প্রকৃতিগতএর মোকাবিলা করার জন্য সরকার বাজেটের ভর্তুকি থেকে কৃষকদের সহায়তা করতে পারে, বিশেষত বন্যাপীড়িত এলাকার কৃষকদের যা একটা সময়ের দাবিকারণ, প্রকৃতিনির্ভর কৃষি দিয়ে ২১ শতকের সমস্যা মোকাবিলা অনেকটা অসম্ভবের মধ্যেই রয়ে গেছে, যা সরকার ও  নীতিনির্ধারকরা জানেনকাজেই খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে মৌসুমি ফসল আমন ধানকে রক্ষা করতে হবে এবং এর  মোকাবিলায়  সমন্বিত  কর্মসূচি নিয়ে আগাতে হবেবিশেষত কখনো খরা, কখনো অতি বৃষ্টি যখনএ কথা মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ মাথায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করার পাশাপাশি চাহিদা সম্প্রসারণমূলক সেবাগুলোর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা

বাংলাদেশে কৃষি উপাদনের প্রায় সকল উপকরণই বিদেশনির্ভরএমন অবস্থায় খাদ্য উপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জবিদ্যমান পরিস্থিতে বাংলাদেশের সামনে একটাই লক্ষ্য খাদ্য উপাদন বাড়ানো- তা যেভাবেই হোকবিগত ৫ বছরের (২০১৭-২০২১) আমন মৌসুমের আবহাওয়ার উপাদানসমূহ এবং ফলনের ওপর এদের প্রভাবের গাণিতিক বিশ্লেষণের  মাধ্যমে আমনের ফলন প্রাক্কলন করে দেখা যায় যে, এ বছর আমনে প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ টন চাল উপাদন প্রত্যাশা করা হয়েছে। 

আমন উত্তোলনের পর দেশে সারাবছরে খাদ্য পরিস্থিতি কেমন হবে? ব্রির হিসাবে, আউশ (৩.০ মি. টন), আমন (১৬.৩ মি.টন) ও বোরোর (২০.৪ মি.টন) ধরে মোট উপাদন হবে ৩৯.৭ মি. টনপ্রতিদিন জনপ্রতি ৪০৫ গ্রাম করে চালের পরিমাণ হিসাব করলে ১৭ কোটি মানুষের জন্য চালের প্রয়োজন হবে ২৫.১৩ মি. টনঅন্যান্য সহ ২৬.১২% হিসাব করে চালের প্রয়োজন ১০.৩৭ মি. টনসে হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকবে ৪.২ মি. টন বা ৪২ লাখ টনএ হিসাব যদি  আমরা বিবেচনায় নেই, আগামী বছরের জুন পর্যন্ত দেশে চালের কোনো সংকট হবে নাশুধু প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা নিশ্চিত করাকেবল গুজবে কান না দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে নিজেরা সাবলম্বী হই, অন্যকে সহায়তা করি এবং সরকারের হাতকে শক্তিশালী করি

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক 

জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি

অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা

×