ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ

-

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৮ মে ২০২৪

অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ

সম্পাদকীয়

দেরিতে হলেও সরকারের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এতে নি¤œ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বেতন লাগবে না। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিখন অভিযানে আরও ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থী হারিয়ে যায়।

সেক্ষেত্রে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হলে ঝরে পড়ার হার অবশ্যই কমবে। নারী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি। মেয়েরা একটু বড় হলেই অভিভাবকরা তাদের জন্য শিক্ষাবাবদ খরচ করাকে মনে করে অপব্যয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে অবৈতনিক করার পাশাপাশি করতে হবে বাধ্যতামূলক।

যা শিশুশ্রম কমাতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। দেশে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মৌলিক বা বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু রয়েছে। বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারে খুদে শিক্ষার্থীরা। এবার সরকার অবৈতনিক শিক্ষা কার্যকর করতে যাচ্ছে অষ্টম শ্রেণি (নি¤œ মাধ্যমিক) পর্যন্ত।  
দেশ স্বাধীনের পরপরই প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এর মধ্যে ৬৯৬টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করতে হলে অবকাঠামো খরচ ও সমন্বয়হীনতা ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। সরকারের লক্ষ্য শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করা।

প্রথম পর্যায়ে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষাবিদদের মতে, আগামী দুই বছরের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা উচিত। 
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও উপবৃত্তি দিয়ে আসছে সরকার। এটি সারাবিশ্বের বিস্ময়! এর সুফল পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এখন সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করানো। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে কারিগরি শিক্ষাও। যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে দক্ষ হয়ে। শিক্ষা পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক সমাপনীতে পাশ করা ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এসএসসিতে অংশ নেয় ২১ থেকে ২২ লাখ। অর্থাৎ, পাঁচ বছরের ব্যবধানে আট লাখের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে যায়।

এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী অদক্ষ হয়ে প্রবেশ করে কর্মক্ষেত্রে। এজন্য অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থাকে করতে হবে মানসম্পন্ন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হতে হবে কঠোর। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সৎ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থী গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

×