ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ হোক সড়ক

সাকিবুল হাছান

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপদ হোক সড়ক

.

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। অথচ সেই দুর্ঘটনাই ঘটছে অহরহ, অবিরত। দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে। রক্তাক্ত হচ্ছে সড়ক, ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। প্রতিদিন টিভি বা পত্রিকার পাতা উল্টালে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়ে। দুর্ঘটনা রোধে আইনকানুন বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করা, অদক্ষ চালক হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো, চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। ফলে, এক সময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। চালকদের ওভারটেকিং প্রবণতা সড়ক দুর্ঘটনার আরও একটি অন্যতম কারণ।

গত মাসে এক ব্যাংক কর্মকর্তা তার পরিবার নিয়ে উত্তরায় রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ পেছন থেকে প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে তিনি এবং তার পরিবার মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে তাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থা অবনতি হলে তাদের আরেকটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। খুবই দুঃখের বিষয় হলো, কয়েকদিন পর সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এভাবেই নীরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন শতশত মানুষ। এই দায়ভার কাদের! আর কত প্রাণ শেষ হলে আমরা সতর্ক হব। প্রতিনিয়ত সড়ক রক্তাক্ত হচ্ছে কেন!

আমরা সড়কে আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে, সিট বেল্ট বাঁধা এবং নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য আরও মনোযোগী হতে হবে। একটু অমনোযোগী ড্রাইভিংয়ের কারণে, ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তাছাড়া অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। কারণ বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অদক্ষ চালকের জন্য। হুটহাট গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানোও বড় দুর্ঘটনার কারণ। তাই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেক সময় ওভারটেকিং করার জন্য প্রতিযোগিতা করে অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রত্যেকটি গাড়ির দুটি লুকিং গ্লাস থাকতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় অনেক চালক নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বাসের  দুর্ঘটনার কারণ নেশাগ্রস্ত চালক। তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে।

সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪ ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ১০৫ নম্বর ধারায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় ন্ডে বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু কার্যকর

সড়ক পরিবহন আইন এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে অনেকক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসতর্কতা এবং অসচেতনতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই শুধু আইনের বাস্তবায়ন নয়, নাগরিকদের সচেতনতা সেইসঙ্গে কর্তৃপক্ষ, চালক, শ্রমিক যাত্রী সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

×