ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সুইডেনে ইসরাইল বিরোধী সমাবেশে গ্রেটা থুনবার্গ

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১০ মে ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের  সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি

.সুইডেনের মালমো শহরে শুক্রবার ইসরাইলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ হয়। এদিন এমআইটি ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-বিক্ষোভকারী বাগবিতন্ডা হয়। পুলিশ ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ায় সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। সময় বহু শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এদিন সুইডেনের মালমো শহরেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী। শহরটিতে ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় ইসরাইলের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ করে তারা। মালমো শহরে বৃহস্পতিবার রাতে গানের প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল অনুষ্ঠান হয়। সেখানে অংশ নেয় ইসরাইলি প্রতিযোগী এডেন গোলান। ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে যারা অংশ নিয়েছে তার মধ্যে আছেন জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং কিছু করার একটিনৈতিক দায়বদ্ধতাআছে। তিনি বলেন, আমরা ইউরোভিশন প্রতিযোগিতার সময় হাজারে হাজারে মানুষ স্রোতের মতো মালমোর রাস্তায় নামলে এটাই বলা হবে যে আমরা এমনটি চলতে থাকা মেনে নেব না। আর তখন এটি খুবই শক্তিশালী একটি সংকেত হবে এবং এর কিছু প্রভাব পড়বে।

আরেকজন বিক্ষোভকারী বলেন, তিনি চান ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় ইসরাইলকে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক। যেমনটি রাশিয়াকে করা হয়েছিল ইউক্রেনে পুরোদস্তর রুশ আগ্রাসন শুরুর পর। খবর আলজাজিরা, বিবিসি এএফপির। 

তবে ইসরাইলি প্রতিযোগী গোলান বলেন, এই সংগীত প্রতিযোগিতায় তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে তিনি গর্বিত। কোনো কিছুই তাকে প্রতিযোগিতা থেকে নিবৃত্ত করতে পারবে না।

এর আগে আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন অবশেষে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা আর ইসরাইলি বিনিয়োগ গ্রহণ করবে না এবং যে বিনিয়োগ রয়েছে তাও ফিরিয়ে দেবে। এরপরই ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। গত কয়েক দিন ধরে ফিলিস্তিনপন্থিরা এই ক্যাম্পাসে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ করছিল। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে নিতে গেলে ডাচ দাঙ্গা পুলিশ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে  সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সোমবার থেকে এখানে এই অস্থিরতা চলছে। পুলিশ জানায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাজধানীর কেন্দ্রে একটি প্রধান সড়কেসহিংসতা, ধ্বংস, হামলা উস্কানিরজন্য ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আমস্টারডাম শহরের কেন্দ্রে বিন্নেনগাস্তুইস ভবনের সামনের একটি এলাকা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়ার সময় দাঙ্গা পোশাক পরা কয়েক ডজন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একটি দলের সঙ্গে হাতাহাতি করে।

পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকারীরা রোকিন নামক স্থানীয় একটি প্রধান রাস্তা অবরোধ করায় সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিক্ষোভকারীরা সময়দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে অ্যামোনিয়া নিক্ষেপ করে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (ইউভিএ) গাজা যুদ্ধের জন্য ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছে এবং তারা মার্কিন ক্যাম্পাসে চলমান বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়েছে।

মধ্যরাতের একটু আগে, আমস্টারডাম পুলিশ জানায়, পরিস্থিতিশান্তএবং বেশিরভাগ বিক্ষোভকারী এলাকা ছেড়ে গেছে। তারা আগে বলেছিল, আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি বিঘ্নি করা এবং সম্পত্তি ধ্বংস করার অভিযোগ আনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে মেয়রের অনুমোদন পেয়েছে।

পুলিশ বেশ অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে, যাদের সংখ্যা কয়েকশছিল। ব্যারিকেডগুলোকে একটি লোডার ট্রাক ঠেলে একটি খালে ফেলে দেওয়ার সময় পুলিশ ক্যাম্পাসে থাকা বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট দলকে ঘিরে রেখেছে। বিক্ষোভকারীরামুক্ত ফিলিস্তিনলেখা প্ল্যাকার্ড নাড়ছিল এবং পুলিশকেশ্যাম অন ইউবলে চিৎকার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। অন্তত ১৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমস্টারডাম সিটি কাউন্সিলে শুক্রবার চলমান বিক্ষোভ সম্পর্কে একটি জরুরি বিতর্কের কথা রয়েছে। উট্রেচ্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসসহ নেদারল্যান্ডসের অন্যত্র বিক্ষোভকারীরা জড়ো হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা   পুলিশের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তান দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ইসরাইল বিরোধী স্লোগান দেয়। ছাড়া ফ্রান্স, ব্রিটেন, সুইডেন, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, জর্ডান, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, পোলা-, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড মেক্সিকোয় বিক্ষোভ চলছে। জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিপজিগের একটি লেকচার হল দখল করেন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল। দখলের পর তারা হলের সমানে ব্যানার টানান। সেখানে লেখা ছিল, ‘গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল

ব্যানার টানানোর পাশাপাশি লেকচার হলের সামনে ব্যারিকেড স্থাপন করে সেটিকেমুক্তাঞ্চলঘোষণা এবং হলের আশপাশের ফাঁকা জমিতে অস্থায়ী তাঁবুও স্থাপন করেন তারা। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ফিরে না যাওয়ায় সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পুলিশ এসে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি লিপজিগ পুলিশ, তবে হল দখলের পরিকল্পনা উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ১৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ফিলিস্তিনপন্থি সমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে  বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ফিলিস্তিনি পতাকা ব্যানার বহনকারী ৩০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী ওই সমাবেশে অংশ নেন। সময় তাদের হাতে স্তনিদের সমর্থনে লেখা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। গ্রিসের রাজধানীতে অবস্থিত সংসদ ভবনের বাইরে সমাবেশ করেন তারা। ৬০ বছর বয়সী পেনশনভোগী আন্তোনিস দাভানেলোস বলেন, ‘আমরা এখানে সংহতি জানাতে এসেছি এবং ফিলিস্তিনিরা যখনই (সংহতির জন্য) ডাকবে, আমরা তখনই সাড়া দেব। ইসরাইলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবিতে চলতি সপ্তাহে আন্দোলন শুরু হয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রধান তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব ল্যুজান, ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা এবং ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ। এক বিবৃতিতে ইউনিভার্সিটি অব ল্যুজানের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যে দাবি শিক্ষার্থীদের একাংশ তুলছেন, তা মেনে নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয়।অন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী। বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়েও গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভের জেরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও গভীরভাবে হতাশ। ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেউ স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের জায়গা পরিবর্তন করছে, কেউ আয়োজনে পরিবর্তন আনছে, আবার কেউ কেউ অনুষ্ঠানই বাতিল করছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের প্রধান অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কীভাবে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করা হবে, তা নিয়ে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

ছোট পরিসরের অনুষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই ম্যানহাটানের ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হবে। নিউইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থিরা। সোমবার হাই-প্রোফাইল ফ্যাশন ইভেন্ট মেট গালার অনুষ্ঠান চলাকালীন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ্যালি করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে প্রেপ্তারও করেছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাবু ভেঙে দেওয়া এবং কমপক্ষে ২৫ জন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার এক দিনের মাথায় এমন ঘটনা ঘটল। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকে। এর পর ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো ভেঙে ফেলে তারা। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের বছরটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বিক্ষোভের ঘটনা রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের ছাত্রদের একটি গ্রুপ কলাম্বিয়া ভার্সিটির হ্যামিলটন হলের দখল নেয়। হলটি ১৯৬৮ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরাইলবিরোধী এই আন্দোলন।

×