ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্মার্ট বাংলাদেশ ও  প্রকৌশলীদের ভাবনা

জাহিদ আবছার চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:২৬, ১০ মে ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশ ও  প্রকৌশলীদের ভাবনা

.

আজ ১১ মার্চ প্রকৌশলীদের ৬১ তম জাতীয় কনভেনশন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারাদেশের প্রকৌশলীবৃন্দ আজ উৎসবমুখর পরিবেশে কনভেনশন উদ্যাপন করছে। ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ (বিজয়ের মাত্র ১০দিনের মধ্যে), সেই সভাতেই ‘ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স পাকিস্তান’ নাম পরিবর্তিত হয়ে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ নাম পরিগ্রহ করে। 
আইইবি-এর গঠনতন্ত্রে ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠার নানাবিধ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা লেখা আছে, প্রতিষ্ঠার ৭০ বৎসরে সেগুলোর অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের অর্জনও কম নয়।
একবিংশ শতাব্দিতে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে আমাদেরকে ‘সফলতায়’ আহ্লাদিত না হয়ে ব্যর্থতার দিকসমূহ চিহ্নিত করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচী নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো হবে- প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সকল প্রকৌশলীকে আইইবি-এর ছত্রছায়ায় আনা, সার্বিকভাবে পর্যাপ্ত এবং উন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থার সংস্থান, কেন্দ্র-উপকেন্দ্রে কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা, আইইবিকে দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তিমূলে প্রতিষ্ঠা করা, জনসংযোগ ব্যবস্থা, প্রকাশনা পর্যাপ্ত করা,  রক্ষণাবেক্ষণ, রেকর্ড কিপিংয়ের উন্নতি সাধন, জাতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ে অন্যতম ‘প্রেসার গ্রুপ’ বা নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ এ মিশন নিয়েই আইইবি-এর জন্ম। ‘উন্নত জগৎ’ গঠন করতে হলে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো একবিংশ শতাব্দির উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ভিত্তি বিংশ শতাব্দীতে রচনা করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগে একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হবে গতিশীলতা এবং শক্ত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা। একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইনস্টিটিউশনকে অতীত ভুল, ব্যর্থতা ও অসম্পূর্ণতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত তা পুষিয়ে নিতে হবে এবং প্রকৌশলীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দিতে হবে। 
বাংলাদেশ হাঁটি হাঁটি পা করে উন্নয়নের পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানাপোড়েন, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ শক্তির অপ্রতুলতা, দুর্নীতি, উন্নত প্রযুক্তি বিনিময় ও আত্মীকরণে পশ্চাদপদতা এ সবই হচ্ছে আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় আইইবিকে একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকৌশলীদের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে ইনস্টিটিউশনের ভূমিকাকে আমরা এভাবে দেখতে চাই- পেশাগত মান উন্নয়ন এবং দক্ষতা অর্জন ও বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কনফারেন্স ও সর্বোপরি ‘লার্নেড সোসাইটি কার্যক্রম’ জোরদারকরণ; সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সমকক্ষ অন্যান্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্যক্ষেত্রে জাতীয় উন্নয়নে যৌথ অবদান রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ; ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন সমূহের ব্যাপ্তি ঘটানো, কার্যক্রম বৃদ্ধি ও অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদান।

গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে উৎসাহ প্রদান; অনলাইন ভোটিং সিস্টেমসহ সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড্ করার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরবর্তী মেয়াদের নির্বাচনে অনলাইন ভোটিং সিস্টেমস প্রয়োগ; ইঞ্জিনিয়ার্স মোবিলিটি ফোরামের চূড়ান্ত সদস্যপদ লাভ এবং ওয়াশিংটন একর্ডভূক্ত হওয়ার জন্য বিপিআরবি’র প্রচেষ্টা জোরদারকরণ; ইএসবিবির কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ, উন্নত প্রযুক্তি আত্মীকরণের সহায়ক কারিকুলাম প্রণয়ন; প্রকৌশল শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ; প্রযুক্তি হস্তান্তর, বিনিময় এবং আত্মীকরণে সরকারকে সময়ে সময়ে এবং নিয়মিতভাবে কার্যকর পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদানের কার্যক্রম জোরদার করা; একটি কালজয়ী উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব জাতীয় প্রযুক্তি ও প্রকৌশল নীতি প্রণয়নে সরকারকে উদ্ভুদ্ধকরণ; জ্বালানি নিরাপত্তা, জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানিসম্পদ উন্নয়ন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ‘জাতীয় উপদেষ্টার’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া; স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পরামর্শ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করতে হবে; ইনস্টিটিউশনের পেশাগত স্বাতন্ত্র্য অটুট রাখা; জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমান শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রকৌশলীদের প্রস্তুত করতে হলে ইনস্টিটিউশনকেই মুখ্য ও নিয়ামক ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। তিনি এবং তাঁর সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। আমরা ৬১তম কনভেনশনের যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি, সেটি রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের আকাক্সক্ষার সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ। আশা করি, এই কনভেনশন আমাদের জাতীয় উন্নয়নে নেতৃত্বদানে প্রস্তুত হতে অনুপ্রাণিত করবে। 
সমাজের অগ্রসর শ্রেণি হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন, উৎকর্ষতা সাধন এবং আমাদের মনন ও মেধার সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে কেবল সে দায়িত্ব পালনে সফল হওয়া সম্ভব, ‘অন্য কোনো পন্থায় নয়’। অন্য কথায় নিরঙ্কুশ পেশাগত আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতাই আমাদের মর্যাদা অর্জন এবং সার্বিক সাফল্য লাভের একমাত্র সোপান।
লেখক : প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ 

×