ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাতকুয়া-সৌরবিদ্যুৎ

প্রকাশিত: ২০:২১, ১০ মে ২০২৪

পাতকুয়া-সৌরবিদ্যুৎ

.

পরিবেশবান্ধব দূষণমুক্ত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের অনেক কৃষক এখন খুব সহজেই স্বল্প খরচে চাষাবাদ করতে পারছেন। কৃষকের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন  করপোরেশন যৌথভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঁচ বছর মেয়াদি ৩২৭টি পাতকুয়া-সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র পরিচালনা করছে। এতে এ পর্যন্ত সেচের আওতায় এসেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি। এ ব্যবস্থায় কৃষকের শুধু উৎপাদন খরচই কমছে না, ডিজেল-কেরোসিনের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা হ্রাসসহ লোডশেডিংয়ের আশঙ্কাও থাকছে না। সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশ থাকছে কলুষমুক্ত। পাতকুয়া-সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ প্রথমে একটি কূপ খনন করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। পরে শুষ্ক মৌসুমে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে সেই পানি পাম্পের মাধ্যমে জমিতে ব্যবহার করা হয় সেচের কাজে। এর জন্য একটি পাতকুয়া এবং সৌরবিদ্যুতের প্যানেলসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি বসাতে গড়ে ব্যয় হয় ২২ লাখ টাকা। কৃষকের পক্ষে এককালীন এত বিপুল ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। পাতকুয়া থেকে পানি তোলার জন্য ৪ দশমিক ৮ অশ্বশক্তির পাম্প ব্যবহার করা হয়। পাতকুয়ার ওপরে ছাতার মতো নানা আকৃতির ছয়-সাতটি সোলার প্যানেল বসানো থাকে। মাঝখানে থাকে বড় ছিদ্রযুক্ত পাইপ, যা নেমে যায় পাতকুয়ার ভেতরে। বৃষ্টির পানি এই পাইপের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয় কুয়ায়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের খুব একটা প্রয়োজন হয় না জরুরি প্রয়োজন ছাড়া। কৃষকের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকায় রংপুর অঞ্চলে আরও প্রায় পাঁচশ’ সৌরবিদ্যুৎচালিত পাতকুয়া স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এ বলেছেন, ‘দেশের প্রত্যেক মানুষের ঘরে আমরা আলো জ্বালব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর প্রায় ৫৫ শতাংশ নির্ভরশীল। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ১০ শতাংশ এবং তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশের জলবায়ু রক্ষার্থে ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্যতম ভরসা বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গএনইএফ। সংস্থাটি বলেছে, দেশের জ্বালানি খাতে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। যা এই দশকের শেষ নাগাদ কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় হবে সস্তা ও সহজলভ্য। 
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে এশিয়ার দেশগুলো এগিয়ে আছে। ২০২২ সালে চীন নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ১৪১ গিগাওয়াট। একই বছরে ভারত উৎপাদন করেছে ১৫ দশমিক ৭ গিগাওয়াট। বাংলাদেশও ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পথে হাঁটছে। বর্তমানে দেশে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মানি ও বাংলাদেশের সৌরশক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, জার্মানির যে কোনো জায়গায় সূর্য থেকে আসা সর্বোচ্চ সৌরশক্তিও বাংলাদেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশ জার্মানির চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশে বাতাস থেকে ১ হাজার এবং বর্জ্য থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের পরনির্ভরশীলতা দূর হয়ে যাবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উন্নয়নশীল এ দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস কাজে লাগানো সময়ের দাবি। 

×