ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঝুঁকির মুখে সেতুর নিরাপত্তা

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ^রদী

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১০ মে ২০২৪

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায়  বালু উত্তোলন  বন্ধ হচ্ছে না

বালু তোলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থে পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালু উত্তোলন বিক্রি করা বন্ধ হচ্ছে না। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সহযোগিতায় এই বালু উত্তোলন চলছে। অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল রেলসহ রেলের পাকশী বিভাগের সেতু প্রকৌশলী বিভাগসহ সকল বিভাগের শঙ্কিত দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা হার্ডিঞ্জ সেতু রক্ষার মাধ্যমে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় অফিস, রেলওয়ে সেতু বিভাগ কেপিআই সার্ভে টিমের দায়িত্বশীল সূত্রের দেওয়া অভিযোগে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের -শ্রেণির কেপিআইভুক্ত স্থাপনা রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কেপিআই সার্ভে টিমের এবং দেশীয় রেলওয়ে সেতু বিভাগ আন্তর্জাতিক সেতু বিশেষজ্ঞদের দিকনির্দেশনায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি রক্ষণা-বেক্ষণ করা হচ্ছিল। ব্রিজের বয়স শতবর্ষ অতিক্রম করায় সম্প্রতি পাকশীতে বুয়েটের শিক্ষক আন্তর্জাতিক সেতু বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সেতু বিশেষজ্ঞ দল পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তারা দ্বিতীয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের জন্যও সার্ভে করেন। পরিদর্শন শেষে লালন শাহ সেতু টোল প্লাজার সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, নিয়মানুযায়ী সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে আরও পৌনে একশবছর ঝুঁকিমুক্তভাবে এই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে, যদি ব্রিজটির নিচ থেকে শুরু করে উভয় পাড়ের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্য থেকে কোনো প্রকার বালু উত্তোলন, পাথর উত্তোলন, প্রটেকশন বাঁধের মাটি না কাটা বাঁধের পাথর না সরানো হয়।

তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীও এই মুহূর্তে পাকশীতে দ্বিতীয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করতে রাজি নন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রায় দশ বছর থেকে বালু উত্তোলন, বিক্রি নদী রক্ষা বাঁধ কেটে তৈরি করা রাস্তা দিয়ে বালু পরিবহনের মাধ্যমে হার্ডিঞ্জ সেতুর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের আখের গোছাতে  আয়কর ফাঁকি দেওয়া দুদক কর্মকর্তাদের ধারণার বাইরে থাকা পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছ থেকে পদ্মা নদীর বালু উত্তোলন, বালু বহনের জন্য প্রটেকশকন বাঁধ কেটে বালুবাহী যানবাহন চলাচলের রাস্তা তৈরি করে ব্রিজ এবং গোটা পাকশী শহরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

যুগ যুগ ধরে প্রটেকশন বাঁধের বোল্ডার পাথর চুরির ইতিহাস এলাকার অনেক মানুষেরই জানা আছে। সচেতন মহল, রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এলাকার সাধারণ মানুষের আশঙ্কাÑ বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানির চাপ বাড়লে বাঁধ ভেঙে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস, ইপিজেড, ঐতিহাসিক খানকা শরিফ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাকশী শহর, এমনকি নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে। রেলমন্ত্রী হাডিঞ্জ সেতুর অ্যালাইনমেন্টের নিরাপত্তার জন্য সেতুর উভয় দিকের গাইড বাঁধ কেটে বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় পশ্চিম রেলের জিএমের পক্ষে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করীম গত ৩১.০৭.২৩ ইং তারিখে হার্ডিঞ্জ সেতুর অ্যালাইনমেন্টের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সেতুর অ্যালাইনমেন্টের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলন এবং সেতুর উভয় দিকের গাইড বাঁধ কেটে বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক চলাচল বন্ধ করার জন্য সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী রেলওয়ে পাকশীকে নির্দেশ প্রদান করেন।

গত ২৪.০৮.২০২৩ তারিখে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৯তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রদেয় এক মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উক্ত স্থানে যদি বালু রাখা হয়, সে বালু নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ প্রদান করেন প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করীম। কিন্তু নিলাম করার নির্দেশ দেওয়ার এক মাস পার হলেও সে বালু এখনো নিলাম করা হয়নি এবং উভয় পাড়ের বালু বহনের ট্রাক চলাচলও বন্ধ করা হয়নি।

×