ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

গণতন্ত্র সম্মেলন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়

মো. জাকির হোসেন

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গণতন্ত্র সম্মেলন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়

আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি ২০২৩

আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি ২০২৩’ তথা গণতন্ত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সে সম্মেলনে ১১০টি দেশের প্রায় সাড়ে সাতশ’ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। এবারের গণতন্ত্র সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সহআয়োজক হিসেবে রয়েছে কোস্টারিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং জাম্বিয়া।

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপসহ বিশ্বের ১১১টি দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে। বাংলাদেশ দুই সম্মেলনের কোনোটিতেই আমন্ত্রণ পায়নি। বাংলাদেশ কেন আমন্ত্রণ পায়নি সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে গণতন্ত্র সম্মেলনের একটুখানি ব্যবচ্ছেদ দরকার। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ইকোনমিসস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)’ ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গণতন্ত্রের র‌্যাংকিং প্রকাশ করে আসছে। ক্যাটাগরি চারটি হলোÑ পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, হাইব্রিড শাসন ও কর্তৃত্বপূর্ণ শাসন। ২০২২ সালে ইআইইউ প্রকাশিত গণতন্ত্র র‌্যাংকিংয়ে আয়োজক পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে কোস্টারিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ৭.৯৭ স্কোর নিয়ে গ্রিস ও চেক রিপাবলিক যৌথভাবে প্রথম, ৭.৯৬ স্কোর নিয়ে এস্তোনিয়া দ্বিতীয়, পর্তুগাল ৭.৯৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয়, ৭.৯৩ স্কোর করা ইসরাইল চতুর্থ, আর ৭.৮৫ স্কোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম (প্রকৃত অবস্থান ষষ্ঠ)। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গত সাত বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের আবাসভূমি। আর আয়োজক রাষ্ট্র জাম্বিয়া পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিংবা ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, এটি হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত।

যেসব রাষ্ট্র হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত তাদের মধ্যে ৫.৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে, আর ৫.৮০ স্কোর নিয়ে জাম্বিয়া ষষ্ঠ অবস্থানে। বিষয়টি খুব মিষ্টিমধুর, তাই না? টানা সাত বছর ধরে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র নিজের গণতান্ত্রিক অবস্থানের উন্নতি না করে অন্যদের গণতন্ত্রের সবক দিতে বৈশ্বিক গণতন্ত্র সম্মেলনের আয়োজন করছে। আর সহআয়োজক করেছে জাম্বিয়াকে, যে কিনা গণতান্ত্রিক শাসন থেকে দূরে হাইব্রিড রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। 
এবার গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত রাষ্ট্রসমূহের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। আগেই উল্লেখ করেছি, ৫.৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে। উল্লেখ্য, ১০ নম্বরের মধ্যে কোনো রষ্ট্রের ৪.০০-এর নিচে স্কোর হলে কর্তৃত্বপূর্ণ শাসন, ৪.০১ থেকে ৬.০০ হলে হাইব্রিড শাসন, স্কোর ৬.০১ থেকে ৮.০০ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনের ওপরে হলে তারা পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তার মানে বাংলাদেশ আর দশমিক ০২ স্কোর করলেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাতারে উন্নীত হবে।

যেসব রাষ্ট্র তথাকথিত গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছে সেগুলোর অনেকেই পূর্ণ কিংবা ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো নয়ই, তারা হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রও নয়। এসব রাষ্ট্র কর্তৃত্বপূর্ণ শাসনের তালিকাভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ অ্যাঙ্গোলা (স্কোর ১.৪৮), ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (স্কোর ১.৮) ও ইরাকের (স্কোর ৩.১৩) নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত যেসব রাষ্ট্র মার্কিন গণতন্ত্র বিলাস তথা গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে তাদের অনেকের অবস্থান তলানির দিকে।

উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তানের স্কোর ৪.১৩, নাইজেরিয়ার ৪.২৩ ও নেপালের স্কোর ৪.৯৯ উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব রাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে তাদের সিংহভাগই হাইব্রিড কিংবা কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। হাইব্রিড রাষ্ট্রের তালিকার সবার ওপরে থেকেও বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি, অথচ কর্তৃত্বপরায়ণ অনেক রাষ্ট্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত। এমন আচরণ কি গণতান্ত্রিক? এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য কি গণতন্ত্রের উন্নয়ন? না এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক রাজনীতি এবং বাংলাদেশকে সেই রাজনীতির ফাঁদে ফেলতে জবরদস্তিমূলক অপকৌশল?  
বৈশ্বিক গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র‌্যাংকিং নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহকে ‘মুক্ত (ঋৎবব), আংশিক মুক্ত (চধৎঃরধষষু ঋৎবব) ও মুক্ত নয় (ঘড়ঃ ঋৎবব)’Ñ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফ্রিডম হাউস র‌্যাংকিং করে থাকে। ২০২২ সালে প্রকাশিত ফ্রিডম হাউসের র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ‘আংশিক মুক্ত’ রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ সকলেই ‘আংশিক মুক্ত’ রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে মুক্ত নয় এমন রাষ্ট্রও সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইরাকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেসব রাষ্ট্র মুক্ত নয় তাদের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, অথচ বাংলাদেশ আংশিক মুক্ত ক্যাটাগরিতে থাকলেও আমন্ত্রণ করা হয়নি। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কি হতে পারে? বাংলাদেশের মতো থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ প্রায় শতাধিক রাষ্ট্র বা টেরিটোরিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণের কৌশল বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ নীতির ভিত্তিতে করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কি অন্তর্নিহিত কারণে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সমকক্ষ এবং বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা অনেক রাষ্ট্র আমন্ত্রণ পেল, কিন্তু বাংলাদেশ কেন পেল না? যেসব কারণে বাংলাদেশের প্রতি এমন বৈষম্যমূলক আচরণ তা হলো- এক. ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে পূর্ব-পশ্চিমের দেশগুলোতে বাংলাদেশের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক চোখ এখন ঢাকার দিকে। একদিনে দুই দেশের প্রতিনিধিরাও ঢাকায় আসছেন। এক মাসের মধ্যেই ঢাকা সফর করবেন অন্তত ছয়টি দেশের প্রতিনিধি। সম্পর্ককে পরিচর্যা করতে সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি বাংলাদেশ যেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করে।

কিন্তু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি মানতে নারাজ। দুই. ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি চীনকে বিশ্বের শীর্ষ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে সহায়তা করছে বলে অনেকে মনে করছেন। যুদ্ধের অবসান রাশিয়া ও ইউরোপকে দুর্বল করবে। একই সময়ে এই পরিস্থিতির বড় দুই সুবিধাভোগী হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা চীনকে চাপে ফেলতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কোয়াড নামে জোট গঠন করেছে। ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশগ্রহণ করুক।

কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে না জড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করার নীতি গ্রহণ করছে, যা দেশটির পছন্দ নয়। তিন. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেবল অপছন্দের নয়, বিরক্তির কারণও বটে। কিন্তু বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতাবশতই রাশিয়াকে দূরে ঠেলে দিতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন পাকিস্তান নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে জতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করে।

তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকি বঙ্গোপসাগরে। তাদের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে দেওয়া। কিন্তু রাশিয়ার ভেটোর কারণে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল ব্যর্থ হয়। কৃতজ্ঞতাবোধ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মাণ হচ্ছে। 
খবরে প্রকাশ, বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণের পূর্বশর্ত হিসেবে কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের আগাম প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ঢাকা তাতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি। গণতন্ত্রের বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় আয়োজনে অংশ নিতে  বিভিন্ন দেশকে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য কর্মপরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছিল। যেসব দেশ এ কর্মপরিকল্পনা দেয়নি তাদের এ বছরের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র কি সব রাষ্ট্রের ওপরে সুপার স্টেট যে, গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য কর্মপরিকল্পনা তার কাছে দিতে হবে? তাই যদি করতে হয় তাহলে একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কোথায় থাকে? মূল কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থে কোনো রাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে কখনো প্রচলিত অস্ত্র মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র প্রয়োগ করছে। আবার কখনো অপ্রচলিত অস্ত্র যেমন- মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না করে তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে বাংলাদেশের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

গণতন্ত্র সম্মেলনে যোগ দিলেই কোনো রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় না কিংবা সম্মেলনে যোগ না দিলে অগণতান্ত্রিক হয় না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁর নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হলো। খুনিরা জবরদস্তি ক্ষমতা দখল করল। সংবিধান লঙ্ঘন করে একের পর এক অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে থাকল। খুনিদের বিচার করা যাবে না মর্মে দায়মুক্তি আইন জারি করল। যুক্তরাষ্ট্র তখন ‘স্পিকটি নট’ মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ অনেক দেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত, হত্যা করে অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাদের স্বার্থের প্রয়োজনে দশকের পর দশক ধরে অগণতান্ত্রিক, সামরিক সরকারকে ক্ষমতাসীন রাখতে সবকিছু করেছে তারা। কর্তৃত্ববাদী সরকারকে প্রতিহত করা, দুর্নীতি দমন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা- এই তিন লক্ষ্যে গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করা হলেও অনেক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দেশ এবং মানবাধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে মুক্ত নয়Ñ এমন রাষ্ট্রকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সম্মেলন নিয়ে মুগ্ধ হলে চলবে না। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বাংলাদেশকে হিসাব কষে সাবধানে এগোতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যেমন আমাদের উন্নয়নের অংশীদার, তেমনি পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, হাইটেক পার্কসহ নানা মেগা অবকাঠামো নির্মাণের সহযোগী হয়ে চীনও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। চীন ইতোমধ্যে ভূ-রাজনীতিতেও এতদাঞ্চলে দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সমস্যা মুখ্য নয়। এর পেছনে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী বৈশ্বিক রাজনীতি এবং চীন-রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

×