ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কমুক্ত থাকুক পাঠ্যবই

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিতর্কমুক্ত থাকুক পাঠ্যবই

.

এটি সর্বজনবিদিত যে, সৎ সাংবাদিকতা-অবাধ সংবাদ প্রবাহ সমাজসমৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পক্ষান্তরে অপসাংবাদিকতা-মিথ্যাচার-প্রতারণার মোড়কে বৃহত্তর সহজ-সরল জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করার দৃষ্টান্তও নিহায়ত কম নয়। যে কোনো জাতিরাষ্ট্রে অপকৌশলের বেড়াজালে মিথ্যার বেসাতি সাবলীল ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি কলুষিত করে। প্রতিহিংসা-পরশ্রীকাতরতা নানামুখী অপচেষ্টায় এমন কদাচার পরিবেশ তৈরি করে, যাতে সর্বাধিক স্থিতিশীল সরকারকেও বহুধাবিভক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা ও দেশ পুনরুদ্ধারের সামগ্রিক কর্মযজ্ঞেও নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র জাতি দীর্ঘ সময় অবলোকন করেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্দয়-নিষ্ঠুর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কলঙ্কিত সেনা-স্বৈরশাসক পরিচালিত সরকারের কদর্য অধ্যায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। বিগত প্রায় ১৪ বছর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আকাশচুম্বী অর্জনকে ম্লান করার কুৎসিত দুরভিসন্ধি দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা-অন্তরায় তৈরিতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে।
দেশবাসী অবশ্যই অবগত আছেন, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্ধকারের পরাজিত শক্তির সকল অশুভ তৎপরতাকে নিধন করে বাঙালি জাতিরাষ্ট্র অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে বিশ্বপরিম-লে উন্নয়নের রোল মডেল অভিধায় মর্যাদাসীন হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার কথিত আন্দোলন সংগ্রামে জনসম্পৃক্ততা প্রকাশে ছোট বড় বিপক্ষ দলের প্ররোচিত প্রচারণা পাঠ্যপুস্তক নিয়েও উত্থাপিত। উন্নত-উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটির উদাহরণ নতুন কিছু নয়। বর্তমান সরকার ও অধীনস্থ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-প্রতিষ্ঠান-সংস্থাও তেমনি অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। দৃঢ়চেতা-প্রজ্ঞা ও মেধার অভূতপূর্ব সমন্বয়ে বিশ্বস্বীকৃত সফল ও সার্থক সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ পবিত্র জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের এক প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত জোরালো কণ্ঠে বলেছেন, ‘ব্যর্থতা থাকলে খুঁজে দিন, সংশোধন করে নেব।’ জনকল্যাণ নিশ্চিতকল্পে নিখাঁদ দেশপ্রেমিক সৎ-বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়কের এমন উঁচুমার্গের কণ্ঠস্বরে উচ্চকিত বক্তব্য তাঁর সততা-দক্ষতা-যোগ্যতাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করে। অতিসম্প্রতি পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যেসব আলোচনা-সমালোচনা বিপুল প্রচারিত; সত্য-বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণে তার যৌক্তিক যাচাই-বাছাই অতীব জরুরি।
বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আধুনিক-যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন কারিকুলামের এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পুরনো শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত বই উৎসবে বিতরণকৃত বিভিন্ন শ্রেণির কিছু পাঠ্যবইয়ে কৃতিত্ব ছাড়া অন্যের লেখা-ইতিহাস বিকৃতি করে তথ্য-মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদের প্রাধান্য-বিতর্কিত তত্ত্ব-ইসলামবিরোধী ছবি ও লেখা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুসহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধানী পাঠ্যবইয়ে হুবহু অনুবাদের অভিযোগে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত তর্ক-বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভুলের বিষয়টি ছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে বইয়ের ছাপার এবং লেখকদের লেখার মান নিয়ে। অনভিপ্রেত এ ঘটনায় বিভিন্ন মহল সারাদেশে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে চলমান সমালোচনা এবং বিতর্র্ক অনেকাংশে একপেশে হলেও, বিতর্কের শীর্ষ স্থানে আছে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে সংযুক্ত ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়টি। যেখানে আদিম মানুষকে একবারও বানর নয়; বরং প্রাচীন মানুষ এবং সামাজিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তুমুল বিতর্কের ঝড় ওঠে। জাতীয় সংসদ অধিবেশনেও চলেছে এর সমালোচনা। ইসলামিক বক্তারা ওয়াজ মাহফিল, এমনকি জুমার নামাজের খুতবায়ও বিষয়টি উপস্থাপনে পাঠ্যবই থেকে এটি বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অভিযুক্ত লেখকদের এবং ভুল-ভ্রান্তির বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, ভুলের বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। যারা ভুল করেছেন এবং প্লেজিয়ারিজমের সঙ্গে জড়িত তাদের আগামীতে পাঠ্যপুস্তক এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত করা হবে না। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই এবার পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে।

এ বছর মাঠপর্যায়ে সবার মতামতের পর ব্যাপক পরিমার্জন করে আগামী বছর দেওয়া হবে বইগুলোর প্রথম সংস্করণ। নবম দশম শ্রেণির বইয়ে যেসব ভুল রয়েছে তার সংশোধনী ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে এবং এনসিটিবির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে, যেখানে সারাদেশের সব প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি রয়েছে।
১৭ জানুয়ারি ২০২৩ গণমাধ্যম সূত্রমতে, সপ্তম শ্রেণির ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটিতে উৎস উল্লেখ না করেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরে হুবহু অনুবাদ করে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দায় স্বীকার করে রচনা ও সম্পাদনায় সম্পৃক্ত থাকা শিক্ষকগণ এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘একটি পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল হিসেবে বইটি প্রকাশিত হয়। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এসব লেখকের কাছ থেকেই এক ধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশার এবং মন খারাপের কারণ হয়। ঐ অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে। এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে।

কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যে কোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বইয়ের মধ্যে লেখা কারও নিজের তা কেউ দাবি করেনি বিধায় এটাকে চৌর্যবৃত্তি বলা যাবে না। তবে উৎস উল্লেখ না করাটা ভুল ছিল।’
প্রাসঙ্গিকতায় সম্মানিত শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার হবে দক্ষতাভিত্তিক প্রায়োগিক শিক্ষা। আমরা সেদিকে এগোচ্ছি। নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধন করা হবে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের সব বইয়ের পরীক্ষামূলক সংস্করণ ছাপানো হয়েছে। আমরা পরবর্তী সংস্করণে প্রয়োজনীয় সংশোধন করব।’ ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারের নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক না পড়েই মিথ্যাচার করার অভিযোগ এবং যুক্তিযুক্ত ভুল কেউ ধরিয়ে দিলে সংশোধন করা হবে বলেও মন্তব্য করেন। পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধন এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাত সদস্যের উচ্চপর্যায়ের দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উক্ত প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপককে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের কমিটিকে পাঠ্যপুস্তকে ভুলত্রুটি ও বিতর্কিত বিষয় খুঁজে বের করে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে ভুল-ভ্রান্তির জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কোন্ কোন্ কর্মকর্তা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।  
গণমাধ্যমে প্রকাশিত উইকিপিডিয়া সূত্রমতে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত বিষয়গুলো উপস্থাপনের ধরন নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যা ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে সংঘটিত বিতর্কের একটি ধারাবাহিক অংশ। ক্যালিফোর্নিয়ার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে পঠিত দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, হিন্দু ধর্ম, শিখ ধর্ম, দলিত, মুসলমান, রবিদাসিয়াস, সিন্ধু উপত্যকা এবং নারীর অধিকার সম্পর্কিত ইত্যাকার বিষয়গুলো বিশেষ করে গোষ্ঠীগুলোর পুনঃমূল্যায়নের জন্য ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন  ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের কাঠামো হালনাগাদকরণের সর্বজনীন উদ্যোগ গ্রহণ করলে ২০১৭ সালে শিক্ষা বিভাগ বিষয়গুলোর ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে বর্ণ প্রথার বিষয়বস্তুকে পাঠ্যবইয়ে রাখাসহ অন্য অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সব ঐতিহাসিক দক্ষিণ এশিয়াকে ভারত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। স্ক্রোলের তথ্যমতে, সাউথ এশিয়া ফ্যাকাল্টি গ্রুপ ৯৩টি জায়গার মধ্যে ২৪টিতে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটিকে ‘দক্ষিণ এশিয়া’ শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করার অনুরোধ জানিয়ে একটি খসড়া জমা দেয়, যেখানে পাঠ্যক্রম কাঠামোতে পূর্বে ঐতিহাসিক ‘ভারত’ এর উল্লেখ ছিল। ফলশ্রুতিতে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের মতো গোষ্ঠীগুলো ‘দক্ষিণ এশিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করার তীব্র বিরোধিতা করে এবং ‘ডোন্ট ইরেজ ইন্ডিয়া’ নামে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পপেন চালু করে। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের ইনস্ট্রাকশনাল কোয়ালিটি কমিশন পাঠ্যক্রম কাঠামোর মধ্যে প্রতিটি জায়গায় ‘ভারত’ শব্দটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এছাড়াও ২০২২ সালের মে-জুন মাসে ভারতের কর্নাটক সরকার ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রতিফলিত করার মধ্য দিয়ে পাঠ্যপুস্তক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
বছরের প্রথমদিন ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী-নারী-পুরুষ-অঞ্চল নির্বিশেষে যুগান্তকারী বিনামূল্যে বই বিতরণ বিশ্বপরিম-লে একটি অনন্য উপমা। কোনো সমাজতান্ত্রিক বা বুর্জোয়া ব্যবস্থার রাষ্ট্রসমূহে এমন বিরল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। শিক্ষার হার উন্নীতকরণ, জীবনমান উন্নয়ন, আপামর জনগোষ্ঠীর সকলকে একীভূত শিক্ষা প্রণোদনার সুদূরপ্রসারী ধ্যান ধারণা থেকেই বিনামূল্যে বই বিতরণ দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণকে অধিকতর শক্তিশালী করবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই বিতরণ উৎসব শুধু অনুপ্রেরণা-উদ্দীপনার সঞ্চারক নয়, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে পর্যাপ্ত জ্ঞান-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার অভিনব পন্থা হিসেবেও বিবেচ্য। ২০৪১ সালে ‘ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে এরাই হবে আমাদের যোগ্যতম উত্তরসূরি। আমাদের সকল দুর্বলতাগুলো সংহার করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে আধুনিক-যুগোপযোগী বিশেষ করে চতুর্থ-পঞ্চম শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় তারাই হবে দক্ষ-প্রশিক্ষিত-গুণী কারিগর। পরিশুদ্ধ শিক্ষা কার্যক্রম-নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক-যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, উন্নত গবেষণালব্ধ জ্ঞান সৃজন-উৎপাদন-বিতরণের পরিশীলিত ও উপযুক্ত সামগ্রিক শিক্ষা পরিবেশ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট সকলেই  দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নির্লোভ-নির্মোহ নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালনে ব্রতী হবেন- এটিই জাতির প্রত্যাশা।

 লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

×