ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শিল্পে শঙ্কা

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০২০

পোশাক শিল্পে শঙ্কা

করোনাভাইরাস অর্থাৎ, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে শীতের প্রারম্ভে বাংলাদেশেও। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া-কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন করে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছে। দৈনন্দিন আয়-রোজগার কমে যাওয়া কিংবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ সেসব দেশে সহজে মুখে মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রকাশ করছেন অপারগতা। কোথাও কোথাও এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সমাবেশও হয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারও গেছে কঠোর অবস্থায়। নতুন করে আরোপিত হয়েছে লকডাউন-শাটডাউন। অথচ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সফল ভ্যাকসিনের কোন খবর নেই। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বলছে তাদের টিকা ৭০ শতাংশ কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মর্ডানা বলছে তাদের টিকা কার্যকর ৯৫ শতাংশ। যা হোক, বাজারে এই টিকা সুলভমূল্যে সহজে পেতে আরও সময় লাগবে, যা হতে পারে ২০২১-এর প্রথমার্ধ নাগাদ। বাংলাদেশের উচিত হবে সবচেয়ে ভাল ও কার্যকর টিকাটি আমদানি করে বাজারজাত করা। আপাতত বিশ^ব্যাপী পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে ক্রমশ। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও এর বাইরে নয়। আসন্ন শীতে প্রকোপ বাড়তে পারে করোনার- এ সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সবার মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নির্দেশ না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জেল ও অর্থদণ্ডের ব্যবস্থাও দৃশ্যমান। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সর্বত্র মানার কথা বলা হচ্ছে জোরেশোরে। সরকার নতুন করে লকডাউন-শাটডাউনের কথা ভাবছে না সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠলে তথা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়লে শেষাবধি কি হয় তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে সর্বস্তরে দেশের সর্বত্র রাজধানী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সে জন্য তৈরি করতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা। ইউরোপ-আমেরিকার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত ইতোমধ্যে হানতে শুরু করেছে দেশের সর্ববৃহৎ রফতানিমুখী খাত পোশাক শিল্পে। ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে পশ্চিমা ক্রেতারা। ফলে স্বভাবতই পোশাক কারখানার মালিকরা রয়েছেন শঙ্কায়। ইতোপূর্বে ৬৬ দিনের লকডাউনেও কারখানাগুলো ছিল বন্ধ। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফিরে আসতে থাকে ক্রয়াদেশ। ঘুরে দাঁড়াতে থাকে পোশাক খাত। গত কয়েক মাসে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর মিলেছে পোশাক খাতে। করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব বিশ্বখ্যাত নামী-দামী ব্র্যান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত অথবা কমিয়ে দিয়েছিল, তারা আবার ফিরে এসেছে। পুরনো ক্রয়াদেশ দিয়েছে নতুন করে। নতুন কার্যাদেশও দিচ্ছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত রফতানি আদেশের অন্তত ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। যেসব অর্ডার আসছে অথবা পথে রয়েছে, তাতে ক্ষতি পুষিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত। অন্তত চলতি বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি শুভ বড়দিন ও খ্রিস্ট নববর্ষ পর্যন্ত। তবে দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র হলে কী হয় তা বলা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের স্বল্পসুদে রফতানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলও যথেষ্ট সহায়তা করেছে। সুতরাং পোশাক শিল্পে আর শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও নয় প্রত্যাশিত। মার্কিন মুলুকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধক তৈরি পোশাক পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ইত্যাদি রফতানি শুরু করেছে। অন্যদিকে করোনার উৎসস্থল চীনকে নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অস্বস্তি থাকার কারণে অন্য কয়েকটি দেশের কার্যাদেশও চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। আসছেও। কেননা, এ দেশে শ্রমমজুরি সস্তা ও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। এর পাশাপাশি স্বল্পসুদে শিল্পঋণ সুবিধা তো আছেই। পোশাক শিল্প মালিকরা এর সর্বোত্তম ব্যবহার করবেন বলেই প্রত্যাশা।
×