ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণহীন ময়লার গাড়ি

-

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

নিয়ন্ত্রণহীন ময়লার গাড়ি

সম্পাদকীয়

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো যেন দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন ও নতুন ঘাতকে পরিণত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মাহিন আহমেদ নামে মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র গাড়িচাপায় নিহত হয়। এ নিয়ে গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। সুষ্ঠু বিচার না হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চালকদের অনেকেরই নেই ভারী যান চালানোর লাইসেন্স। মশককর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্নজনকে দিয়ে চালানো হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ভারী যানবাহন। পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনে ময়লার গাড়িতে ড্যাশ ক্যাম লাগানো হলেও তা খুলে ফেলছেন চালকরা। এ সুযোগে যাকে তাকে দিয়েই বদলি চালানো হচ্ছে ময়লার গাড়িগুলো। নেই অনেক গাড়ির ফিটনেসও। 
সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকদের নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দ থাকা গাড়ি বহিরাগত লোকদের দিয়ে চালানো হয়। মাহিনের মৃত্যুর ঘটনায় তাকে চাপা দেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বদলি একজন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নির্ধারিত গাড়িচালকের পরিবর্তে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়ি চালানোয় সংঘটিত দুর্ঘটনার কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নানা অনিয়ম সত্ত্বেও কেবল সরকারি সংস্থা হওয়ায় এসব গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না ট্রাফিক পুলিশদের। এক্ষেত্রে সরকারি এসব গাড়ির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশন বলছে, পরিবহনের তুলনায় তাদের চালক রয়েছে অর্ধেক সংখ্যক। তা-ও অনেকের লাইসেন্স নেই। যেহেতু ইতোমধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেহেতু এখন থেকে লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ দিয়ে গাড়িগুলো চালানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। 
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন নগরীসহ হাইওয়েগুলোতে যানবাহন চলাচলের সময় সংঘটিত দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের মার্চে দেশে ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৬৫ জন।

চালকদের অসতর্কতা, অসচেতনতা, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ওভারটেকিং প্রবণতা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনা রোধে দেশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরও উন্নত ও আধুনিক করা চাই। সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসাও জরুরি। সর্বোপরি প্রয়োজন সকলের সমন্বিত উদ্যোগ। সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ বিভাগ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

এক্ষেত্রে এই দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যদি সিটি করপোরেশন অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নেয়, তা হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবেÑ এমনটিই প্রত্যাশা। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সকলের আরও বেশি সচেতনতা কাম্য। সবারই মনে রাখা উচিত- সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

×