ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাহাড় নীল সমুদ্রঘেরা স্প্যানিস স্থাপত্যশৈলীর রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা

বাবুল হোসেন

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড় নীল সমুদ্রঘেরা স্প্যানিস স্থাপত্যশৈলীর রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা

পাঁচ তারকা রিসোর্টে আছে ভূতের বাড়ি, ওয়াটার পার্ক ও সুইমিংপুলসহ বাহারি সুবিধা

পাঁচ তারকা রিসোর্টে আছে ভূতের বাড়ি, ওয়াটার পার্ক ও সুইমিংপুলসহ বাহারি সুবিধা। চোখের সামনেই বিশাল জলরাশির নীল সমুদ্র। ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিশাল সৈকতের বালিজুড়ে। সমুদ্রসৈকতে স্থান আর জলকেলিতে মেতে উঠছে নানা বয়সী দেশী-বিদেশী পর্যটক। জোয়ার আর ভাটার নৈসর্গিক দৃশ্যের দেখা মিলছে চোখের সীমানায়। রাতে চাঁদের আলোয় সমুদ্রের রাশি রাশি ঢেউ থেকে বিচ্ছুরিত আলোর কণা ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।

পেছনেই রয়েছে গহিন সবুজ বনের সুউচ্চ পাহাড়ের আকাশচুম্বী সারি। নারকেল আর তাল, সুপারি,পামসহ বাহারি বৃক্ষরাজির। সারি সারি এসব বৃক্ষরাজি পাখ-পাখালির কলরবে মুখর থাকছে সারাক্ষণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত ইনানী বীচে স্প্যানিস স্থাপত্যশৈলীর পাঁচ তারকা মানের দৃষ্টিনন্দন হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পায়ের প্রতিটি কক্ষ থেকেই উপভোগ করা যাচ্ছে চোখ জুড়ানো এমন দৃশ্যপট।

পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের ইনানী বীচের জালিয়াপালং এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেল সী পার্ল রিসোর্টের প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য উপভোগ করতে বছরজুড়ে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকছে। ঈদ ও নববর্ষের ছুটি ছাড়াও থার্টিফার্স্ট নাইটসহ নানা উৎসব ও সময়ে ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ছুটে আসছেন সমুদ্র সৈকত পারের এই রিসোর্টে।

পর্যটক টানতে হোটেল সী পার্ল কর্তৃপক্ষ রিসোর্টের ভেতরে বাইরে মনকাড়া বাহারি সুবিধার ব্যবস্থা করে রেখেছে। হোটেল সী পার্লকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য মনোরম প্রাকৃতিক সাজে। দেশী-বিদেশী নানা বয়সী পর্যটকদের জন্য আলাদা একাধিক সুইমিংপুল, ওয়াটার পার্ক, আন্তর্জাতিক মানের বার, রেস্টুরেন্ট, জিম, থ্রিডি মুভি হল, ভূতের বাড়ি, কৃত্রিম সমুদ্রের ঢেউসহ নানা বিনোদনের আয়োজন। সমুদ্র দেখতে আসা নানা শ্রেণিপেশার পর্যটক রিসোর্টের এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়ে খুশি।

হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পায়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হক শামীম সিআইপি জানান, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ইনানী বীচের প্রাকৃতিক পরিবেশে এই রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়। দেশের পর্যটন শিল্পে বিকাশে আগামীতে আরও পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বিশাল সমুদ্র পারের প্রাকৃতিক পরিবেশের পাহাড় টিলাঘেরা পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত ‘ইনানী বীচ’। পথে পথে ঘন সবুজে ঘেরা পাহাড়ের ঢালে পর্যটন স্পট হিমছড়ি ঝর্ণা, দরিয়া নগর, বার্মিজ মার্কেট আর দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। এক পাশে ছায়াঘেরা পাহাড় টিলা আরেক পাশজুড়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত পেরিয়ে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থায় কম সময়েই পৌঁছানো যায় ইনানীতে।

কক্সবাজার থেকে কিছুটা কোলাহলমুক্ত ও অনেকটাই নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশের বীচ ইনানী। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য এখানে পাহাড় প্রকৃতি আর সমুদ্রের অথৈ নীল জলরাশির পাশে নৈসর্গিক পরিবেশে ব্যক্তি মালিকানায় ৫০ বিঘার বেশি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ তারকা মানের ‘হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’। স্প্যানিস স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব কারুকার্য খচিত ও দৃষ্টিনন্দন নয়তলা বিশিষ্ট এই রিসোর্টে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা নানা বয়সী মানুষের চাহিদা বিবেচনা রেখে থাকা-খাওয়া ও রিসোর্টের নিজস্ব পরিবহনে বেড়ানোসহ সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে।

সৈকত থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে পরিকল্পিতভাবে করা হোটেলের ৪৯৩ কক্ষের প্রতিটি রুমে বসেই সমুদ্রের ভিউ আর পাহাড় দেখার সুবিধা রাখা হয়েছে। এর সুপিরিয়র কক্ষ থেকে হিল ভিউ ও সী ভিউ- এই রকম ভিউয়ের মিশ্রণ রয়েছে। প্রিমিয়াম সী ভিউ স্যুইটে রয়েছে কিচেন, ডাইনিং ও লিভিং এরিয়া। প্যানারমিক সী ভিউ ষ্টুডিও স্যুইটে রয়েছে কিচেন, ডাইনিং, লিভিং এরিয়া ও ব্যালকনি। দুই ধরনের ভিন্ন আয়তনের এক্সিকিউটিভ স্যুইটেও রয়েছে একই সুবিধা। ফ্যামিলি স্যুইটে রয়েছে সৈকতমুখী ব্যালকনি, আলাদা লিভিং এরিয়া, কিচেন, ডাইনিং, মাস্টার বেড ও চিলড্রেনস রুম।

বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট। বিশাল আয়তনের রাজসিক অন্দরসজ্জা আর ফার্নিচারের পাশাপাশি রয়েছে বিশাল এক বারান্দা। নব দম্পতিদের জন্য রয়েছে লাক্সারিয়াস হানিমুন স্যুইট, যেখানে সংসারের প্রয়োজনীয় সবই রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে জ্যাকুজি ও সুইমিংপুল। রুম ভেদে প্রতিরাতের ভাড়া ১৯ হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে সারাবছর এসব রুমের ভাড়ায় ৫০ শতাংশের কমবেশিসহ বিভিন্ন হারে ছাড় থাকছে। 
হোটেলের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন একাধিক সুইমিংপুল, ওয়াটার পার্ক,  শিশু গ্রাউন্ড, সমুদ্রের ঢেউয়ের আদলে ওয়াটার ওয়েভ, ভূতের বাড়ি, জিম, বিলিয়ার্ড, স্পা, থ্রিডি মুভি হল, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট, আন্তর্জাতিক মানের বার, কফিশপ, বড় উৎসব ও সভার জন্য দশ হাজার বর্গফুট জায়গার বিশাল সম্মেলন কক্ষ। এর বাইরে আলাদা সেমিনার কক্ষ ও বলরুম।

শিশুদের আনন্দ-বিনোদনেও রাখা হয়েছে নিত্যনতুন বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইডসহ নানা আয়োজন। গল্পের ভূতপ্রেত নিয়ে বিশেষ আবহ তৈরি করে গড়ে তোলা হয়েছে ঘোস্ট হাউসÑ ভূতের বাড়ি। অন্ধকার ঘরের ভেতর কূপ ও মানুষের হাড় কঙ্কাল সাজিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা আলাদা ধাপে ভিন্ন রকমের মিউজিক যুক্ত করে ভূতুড়ে পরিবেশে করা হয়েছে ভূতের বাড়ি। ভূতের বাড়িতে প্রবেশ থেকে শুরু করে বের হওয়া পর্যন্ত আলো-আঁধারির পরিবেশে মিলছে গল্পের ভূতপ্রেতসহ অজানা অনুভূতি। 
কৃত্রিম কম্পন ছড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউ সৃষ্টি করে একটি নির্দ্দিষ্ট জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে ওয়াটার ওয়েভ। সমুদ্রবিলাসী পর্যটকরা রিসোর্টের ক্যাম্পাসের ভেতরেই নিতে পারছেন বাড়তি এই স্বাদ। কৃত্রিম এই সমুদ্র আর কম্পনের ঢেউয়ে চাইলে গা ভিজিয়ে নিতে পারছেন পর্যটকরা। রিসোর্টের ভেতরে শিশু-কিশোরদের জন্য আরও আছে নানা ধরনের গেম ও মিনি গাড়ির রাইড। বর্ণাঢ্য ওয়াটার পার্কেও আছে বিস্ময়কর সব বিনোদন আয়োজন।

আছে প্যারাসেইলিং, ¯েœার কেলিং, ডিপ সী ফিসিং ও স্পিডবোট রাইড। রিসোর্টের ভেতরেই রয়েছে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চাহিদার মুখরোচক বাহারি খাবারের রেস্তোরাঁ, বার, মিটিং ও কনভেনশন ভেন্যু। আছে মাল্টি কুজিন ডাইনিং, আইসক্রিম পার্লার ও জুসবার। ইনানীর এই রিসোর্ট থেকে কক্সবাজার যাতায়াতে রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে সমুদ্র দেখার আনন্দই আলাদা।

রিসোর্টের ব্যবস্থাপনায় আমরা মুগ্ধ। কুষ্টিয়া থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা শিক্ষক দম্পতি শাহনাজ পারভীন ও আব্দুল মতিন জানান, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সমুদ্রসৈকত পারের নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশের হোটেল সী পার্ল সী বীচ রিসোর্টে পর্যটকদের জন্য সব সুবিধাই রয়েছে। সমুদ্র দেখার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রিসোর্টের নিজস্ব আনন্দ-বিনোদনের আয়োজনে এই শিক্ষক দম্পতি জানান সন্তুষ্টির কথা। নানা বয়সী পর্যটকদের জন্য রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ এর ভেতরে বাইরে আনন্দ-বিনোদনে নানা আয়োজন ও রিসোর্ট টিমের আন্তরিক আতিথেয়তায় আবারও আসার কথা জানান অনেকেই।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে কথা হয় সী পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার অস্ট্রেলীয় জেনারেল ম্যানেজার আজিম শাহ-এর সঙ্গে। ঘুরে ফিরে দেখার সময় আলাপচারিতায় তিনি জানান, গত ২০১৫ সালে নির্জন প্রকৃতির কোলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকতে গড়ে তোলা হয় ৪৯৩ রুমবিশিষ্ট এই ফাইভ স্টার হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। ইতোমধ্যে বিশ্বের সেরা রিসোর্টের স্বীকৃতি পেয়েছে হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা।

দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডসে সেরা ৩টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। সেরা লাক্সারি হোটেলগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাকে বিশ্বের সেরা বীচ সাইড লাক্সারি রিসোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গ্লোবাল অর্গানাইজেশন- দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি অ্যাওয়ার্ডস। রয়েল টিউলিপ হিসেেেব পরিচিত দেশের সবচেয়ে বড় এ লাক্সারি রিসোর্টটি সেরা বিচ লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সেরা লাক্সারি স্পা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে।

এছাড়া সেরা জেনারেল ম্যানেজার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন সী পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার আজিম শাহ। তুরস্কের আনাতোলিয়ার সোয়ানডর হোটেলস ও রিসোর্টে অনুষ্ঠিত দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডসের গালা সেরিমনিতে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। আজিম শাহ জনকণ্ঠকে জানান, সী পার্লকে শুধু দেশের নয়, বিশ্বের সেরা রিসোর্টে পরিণত করার জন্য কাজ করে চলেছে সী পার্ল টিম। এই স্বীকৃতি সী পার্ল টিমকে আরও অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করবে।

প্রতিনিয়ত সেবার মান আরও বাড়ানোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সেরা সেবা দিয়ে বিশ্বসেরাদের কাতারে অবস্থানের জন্য কাজ করছে সী পার্ল রিসোর্ট টিম। রিসোর্টের আকর্ষণ বাড়াতে এবং এর ভেতরে বাইরে প্রাকতিক পরিবেশের আবহ তৈরিতে আরও পরিকল্পনার কথাও জানান উদ্যমী জেনারেল ম্যানেজার আজিম শাহ।   
লেখক : সাংবাদিক

×