ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির ওষুধের বাজার

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৩১ মে ২০২০

অস্থির ওষুধের বাজার

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে এও সত্য যে, গত কিছুদিন ধরে লকডাউন শিথিলের কারণে সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে করোনা রোগীর রক্ত পরীক্ষার সুযোগও সীমিত। এই সুযোগে করোনা মহামারীকে পুঁজি করে বেশ দু’পয়সা কামিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণীর ওষুধ ব্যবসায়ী ও দোকানদার। উল্লেখ্য, দেশে লকডাউন চলাকালে গণপরিবহন, যানবাহনসহ শিল্প-কলকারখানা, অফিস-আদালত ইত্যাদি প্রায় বন্ধ থাকলেও ওষুধ শিল্পসহ দোকান ও মার্কেটগুলো খোলা ছিল জরুরী সার্ভিসের আওতায়। অন্যদিকে এ সময়ে সরকারী-বেসরকারী অনেক হাসপাতাল করোনা সন্দেহে অনেক রোগী ভর্তি না করায় সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা পড়েছেন সমূহ বিপাকে ও দুর্ভোগে। এ সময় অনেক চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ রেখে প্রাইভেট প্রাকটিসও করেননি। ফলে ভুক্তভোগী রোগী অথবা তাদের স্বজনরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই ওষুধ কিনে খেয়েছেন পাড়া বা মহল্লার দোকান থেকে। সাধারণ মানুষের এই অনিবার্য দুর্বলতাকে উপলক্ষ করে দু’পয়সা অতিরিক্ত মুনাফার লোভ ছাড়তে পারেননি ওষুধ বিক্রেতারা। ফলে ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অনেক অজ্ঞাত-অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ এমনকি নকল ও ভেজাল ওষুধও বিক্রি করেছেন নির্দ্বিধায়। এর পাশাপাশি বেশি মূল্যে নি¤œমানের মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পিপিই বিক্রির অভিযোগ তো আছেই। তদুপরি রয়েছে গুজবের ডালপালা, শাখা-প্রশাখা। ম্যালেরিয়া কিংবা উকুন মারার ওষুধে করোনা রোগী ভাল হয় জাতীয় ভিত্তিহীন গুজবেও রাতারাতি এসব ওষুধের দাম বেড়ে যায় অথবা বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। গুজবের ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথি-কবিরাজি ওষুধ খাওয়ার অভিযোগও আছে। অন্তত ওষুধ ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের কাছ থেকে এ জাতীয় নীতি-নৈতিকতাহীন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সুবিদিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এদিকে কঠোর নজরদারি করবে বলেই প্রত্যাশা। দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশ ঘটলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতটিতে এখনও নানামুখী সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধ শিল্প বেসরকারী বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্মত অনেক ওষুধ কারখানাও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর নি¤œমানের ভেজাল ওষুধ কারখানা। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কবলে পড়ে ভেজাল, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে সয়লাব হচ্ছে দেশ। এতে স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আইনের দুর্বলতা এবং সুনির্দিষ্ট ওষুধ নীতিমালা না থাকার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না। জাতীয় ওষুধনীতি-২০১৬ প্রণীত হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে অগ্রগতি নেই। শুধু নীতিমালা করলেই হবে না, নীতিমালা অনুযায়ী আইনও থাকা জরুরী। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে আইন আছে, অথচ বাস্তবায়ন নেই। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসন ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে না। এতে কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার কর্তৃক সব ধরনের ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। ওষুধের দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, লাইসেন্সবিহীন দোকানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ, সে ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য ওষুধ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এর পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় মানসম্মত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতসহ সুলভে প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে দেশেই।
×