ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ বিতরণে চাই সমন্বয়

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ৪ এপ্রিল ২০২০

ত্রাণ বিতরণে চাই সমন্বয়

দুর্যোগকালে সরকারের পক্ষ থেকেই শুধু নয়, বেসরকারী নানা সংস্থা ও সংগঠন, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করার রীতি রয়েছে বিশ্বের সব দেশেই। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা প্রায় নিয়মিত দুর্যোগ। এমন ক্রান্তিকালে সফলতার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে জনকল্যাণমূলক বর্তমান সরকারের সময়ে দুর্যোগে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত মানুষের মাঝে সুচারুরূপে ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ব্যাপারে যথেষ্ট মানবিক। একই সঙ্গে অনিয়মের বিরুদ্ধেও সব সময়েই কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে চলেছেন। চলমান করোনা সঙ্কটকালে ঘরে থাকার জন্য সরকারের ছুটি ঘোষণার পর মূলত শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিদিনের খোরাকি সংগ্রহ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন বলেই অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে সমন্বিতভাবে ত্রাণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, সারাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে শহর ও গ্রামে কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন অবস্থায় আছেন। যে সকল কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছে প্রধানমন্ত্রী সে সকল কর্মহীন লোক (যেমন- ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভ্যান গাড়িচালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার) যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে সংসার চালান তাদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কৃষি শ্রমিকসহ উপাকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের বিত্তশালী ব্যক্তি/এনজিও কোন খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে চাইলে জেলা প্রশাসক প্রস্তুতকৃত তালিকার সঙ্গে সমন্বয় করবেন যাতে দ্বৈততা পরিহার করা যায় এবং কোন উপকারভোগী বাদ না পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানা সামাজিক সংগঠন, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও ত্রাণ বিতরণের চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে সরকার সমন্বিতভাবে ত্রাণ বিতরণের সুস্পষ্ট নির্দেশদানের পরও এক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য মানুষ ও সংগঠন। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ত্রাণ বিতরণ, মানুষের মধ্যে নিয়ম না মানার প্রবণতা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে। কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। ‘ঘরে থাকা’র কর্মসূচী সফল করতে কর্মহীন ও গরিব মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। তবে বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন, দলীয়, সামাজিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব না মানার চিত্রও ফুটে উঠছে। ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দূরত্ব (অন্তত তিন ফুট দূরত্ব রেখে অবস্থান করা) না মানায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত অভাবী মানুষের কাছে ত্রাণ কম যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমন্বয় না থাকলে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা থাকবেই। এ জন্য সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় ও নিয়মিত তদারকি দরকার। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণের মানচিত্র তৈরি করাও জরুরী। সমন্বয় না থাকলে কোন এলাকায় একই ত্রাণ একই ব্যক্তি বা পরিবার তিন দফাও পায়। এ অবস্থা এখনও চলছে কিনা খতিয়ে দেখা জরুরী। আমরা আশা করব ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি-সংগঠনের ত্রাণ বিতরণ কাঠামোর মধ্যে আনার তাগিদ মানা হবে। তদারকি জোরদারের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, সেটিও অনুসরণ করা হোক।
×