ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ বইমেলা

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ৩ আগস্ট ২০১৯

 বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ বইমেলা

আগামী বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। ১০০ বছর পূর্ণ হওয়া বঙ্গবন্ধুর জীবন কাহিনী মাত্র অর্ধশতকের ৫৫ বছর। এক নির্মম পাশবিক হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি সপরিবারে খুন হন। দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। শোকের মাস আগস্ট অবর্ণনীয় কষ্ট আর যন্ত্রণায় প্রতি বছর আমাদের সামনে হাজির হয়। এবারও আগস্ট মাস অসহনীয় বেদনায় নতুনভাবে আবারও আমাদের সচকিত করছে। নতুন উদ্দীপনায় অকৃত্রিম দেশাত্মবোধে আমাদের জাগিয়ে রাখতে মাসটির যে গুরুত্ব ও শোকাবহ আবেদন তাকে সামনে রেখেই ৩১ জুলাই উদ্বোধন করা হলো ২০ মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ বইমেলা। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই দীর্ঘতম বইমেলাটি উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ‘বঙ্গবন্ধুকে জানো, দেশকে ভালবাসো’ এমন অমৃত বাণীকে সামনে রেখে যে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয় আগামী ২০ মাস ধরে এর উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য দেশ ও জাতির সর্বময় কল্যাণকে সামনে রেখেই আবহমান বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুকে যথার্থভাবে জানার এবং হৃদয়ে ধারণ করার ব্যাপারটিকে বিবেচনায় এনে তার সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থের সম্প্রসারিত এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তথ্যমন্ত্রী অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলেন- বই পড়ার যে সমৃদ্ধ জগত একদিন সবাইকে আলোকিত পথের সন্ধান দিত আজ তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আওতায় চলে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির সমাদৃত অবয়ব দেশবাসীকে সমৃদ্ধ করবে সেটা যেমন ঠিক, পাশাপাশি বই পড়ার সেই চিরচেনা বিশ্বকে নতুনভাবে অনুধাবন করাও বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সর্বকালের, সর্বযুগের জ্ঞানের ভা-ার বইয়ের বিকল্প আসলে কিছুই নেই। এই গ্রন্থই স্বনামখ্যাত এবং জাতির মহানায়কদের বাঁচিয়ে রাখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। আগে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিল। মানুষের পাঠাভ্যাসও ছিল নজরকাড়া। তেমন অভ্যাস একেবারে নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। এখনও গ্রন্থ বিভিন্ন পাঠকের কাছে তার আবেদন আর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রাবণ প্রকাশনীর উদ্যোগ আর মিডিয়া পার্টনার ‘কালের কণ্ঠের’ সহযোগিতায় দীর্ঘতম এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল। তাঁর মতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের প্রকাশনা যত বাড়বে ততই বিরোধী অপশক্তি নিজের স্বরূপ প্রকাশ করতে ব্যর্থ হবে। ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ ১০০টি বইয়ের সম্ভারে যাত্রা শুরু হওয়া এই মেলাটি জাতির জনকের শতবর্ষের এক অভাবনীয় আয়োজন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহানায়ক সম্পর্কে অনেক বেশি জানা ও বোঝার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে নব নব গ্রন্থের প্রকাশও অত্যন্ত জরুরী, যা সময়ের প্রজন্ম, দেশের আধুনিক ও ভাবী কর্ণধারের জীবন তৈরিতে যুগান্তকারী অবদান রাখবে। ঢাকাকেন্দ্রিক এই বইমেলা সারাদেশে সম্প্রসারিত করতে না পারলে এর মহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। সুতরাং প্রতিপক্ষ ও বিরোধী অশুভশক্তিকে আর কোন সুযোগ দেয়া যাবে না। সঙ্গত কারণে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বইয়ের সংখ্যা শুধু বাড়ানোই নয়, সারাদেশে ছড়িয়েও দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার ‘সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের’ দিকনির্দেশনায় দেশকে ক্রমাগত উন্নয়নের অব্যাহত গতিধারায় এগিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবর্ষ এবং স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীও বিশেষভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়ে আসছে। ২০ মাসব্যাপী এই গ্রন্থমেলা উৎপব তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ। দেশাত্মবোধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর জোরালো আদর্শ নিষ্ঠতার নির্দেশনায় বইয়ের মতো সমৃদ্ধ জগত তৈরি করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের বৈভবে আগামী প্রজন্ম সুসংহত হতে আর কোন বাধা কার্যকরী হবে না।
×