ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

কর্ণফুলী টানেল

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কর্ণফুলী টানেল

উপমহাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ-কর্ণফুলী টানেল। আপাতত স্বপ্নের মতো মনে হলেও অচিরেই তা পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকারের অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম একটি কর্ণফুলী টানেলের ৩২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এর মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে মূল টানেলের খনন কাজ। লুসাই পাহাড়ে উৎপন্ন প্রমত্তা কল্লোলিনী স্রোতস্বিনী কর্ণফুলীর গভীর তলদেশে দুটো টিউব খনন করা হবে, যার ভেতর দিয়ে যানবাহন আসা-যাওয়া করবে চট্টগ্রামের দুই প্রান্তে। তদুপরি পরোক্ষভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত করবে সারাদেশকে। তাছাড়া এর মাধ্যমে মিয়ানমার-চীন-হংকং-থাইল্যান্ডের সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যাত্রা শুরু হবে পূর্বমুখী। চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। নদীর তলদেশে মনুষ্যনির্মিত দ্বিমুখী টানেলের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর ৬৩ লাখ যানবাহন চলাচল করবে। যোগাযোগের এই নিরবচ্ছিন্ন ধারায় নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্য। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে রাজধানী ঢাকার পরেই অবস্থান চট্টগ্রাম মহানগরীর। মূলত এটি দেশের প্রধান নদীবন্দর ও বাণিজ্যনগরী। দেশের আমদানি-রফতানির অন্তত ৯০ শতাংশই সম্পন্ন হয়ে থাকে চট্টগ্রামের মাধ্যমে। দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান মীরসরাই, সীতাকু- ও সোনাগাজী নিয়ে গঠিত বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এর বাইরেও কক্সবাজারের মহেশখালীর মাদারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ফোরলেন সড়কসহ সুবিশাল প্রকল্পের সহাবস্থানও ততোধিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বপ্নের হাতছানি গড়ে উঠছে আগামীর সোনার বাংলাকে ঘিরে। আসিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে চট্টগ্রাম ও সন্নিহিত অঞ্চলের কিছু অনিবার্য সমস্যাও আছে, যা পর্যায়ক্রমে কাটিয়ে ওঠা জরুরী ও অত্যাবশ্যক। বর্তমানে চট্টগ্রামের অবস্থা নিতান্তই সঙ্গীন এবং নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত। একদিকে জনসংখ্যাধিক্য তো আছেই। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন অগণিত লোক ভাগ্যান্বেষনে ঢাকার পরেই পারি জমায় চট্টগ্রামে। সাম্প্রতিককালে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা। কক্সবাজার ও সন্নিহিত অঞ্চলে আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আটকে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই। এর একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন মিয়ানমারে। সরকার অবশ্য এর জন্য সর্বাত্মক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার কথাও না বললেই নয়। অতিবৃষ্টি কিংবা অতি জোয়ার বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রায় তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটে চট্টগ্রাম শহরের। এর সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতাজনিত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সে অবস্থায় চট্টগ্রাম শহর সুরক্ষার নিমিত্ত যথাযথ ও সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্ণফুলী নদীর নাব্য সমস্যাও উল্লেখ করার মতো। নিয়মিত পলিমাটি জমে কর্ণফুলী ইতোমধ্যেই এর নাব্য হারিয়েছে। বন্দর হয়েছে অগভীর। যে কারণে লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে মাল খালাস করতে হয়। নিয়মিত ড্রেজিংও ব্যয়বহুল। কর্ণফুলীর ওপর নির্মিত তিনটি সেতুও নাব্যের প্রতিবন্ধক। অতঃপর এর তলদেশে দু’দুটো টিউব তথা টানেল নির্মাণ করা হলে নদীর নিজস্ব ¯্রােতোধারায় কোন প্রতিবন্ধক বা সমস্যা সৃষ্টি করবে কিনা তা বিবেচনা করা জরুরী অবশ্যই। মোটকথা যা কিছুই করা হোক না কেন কর্ণফুলী নাব্য রেখে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীকে বাসপোযোগী করে গড়ে তোলা আবশ্যক। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব জনহিতকর বিষয় ভেবে দেখবেন নিশ্চয়ই।
×