ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা শেখার বয়স

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৪ নভেম্বর ২০১৮

ভাষা শেখার বয়স

মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ভাষা। জন্মের কিছু সময় উত্তরণের পর শিশুটি যখন তার শারীরিক প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে কাছের জনের নিকটতম হওয়ার চেষ্টা করে তখন তার অঙ্গ সঞ্চালনে কোন কিছু বোঝার অবকাশ আসলেই থাকে না। কাছের মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে কখন সে আধো আধো শব্দচয়নে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারবে। এক সময় সে পারেও। সেই শুরু কোন শিশুর ভাষা শিক্ষার কাল। প্রথমেই একজন শিশু আয়ত্ত করে তার মাতৃভাষা। মা-বাবার সঙ্গে ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে নিজে মায়ের ভাষাকেই প্রথম শেখার চেষ্টা করে। এক সময় তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে হয়। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সময়ের আগ অবধি আপন সংস্কৃতির বেড়াজালে মাতৃভাষাতেই শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে জীবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হতো। তখন অবধি শিক্ষা আন্তর্জাতিকীকরণ হয়নি। আধুনিকতার বিস্তীর্ণ বলয়ে জ্ঞান চর্চার উন্মুক্ত পরিবেশ নিজ দেশের সীমানায় আটকে থাকেনি। বহির্বিশ্বের সঙ্গে জ্ঞান সাধনার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তো আরও কিছু বিদেশী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। সারা ইউরোপে সেই ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া পুনর্জাগরণে শিক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা বৈশ্বিক আঙিনাকে যে পর্যায়ে নিয়ে যায়, সেখান থেকেই শুরু হওয়া বিভিন্ন ভাষার সংযোগ আর বিস্তার সর্বজনীন শিক্ষা এবং জ্ঞান সাধনার আনুষঙ্গিক শর্ত হিসেবে সামনে এসে যায়। ভারত উপমহাদেশে উনিশ শতকীয় নবজাগরণে ভিন্ন দেশী ভাষা ইংরেজী শিক্ষার যে প্রচলন শুরু হয়, সেও ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়। ফলে মানুষের প্রতিনিয়ত জীবনের ভাব বিনিময়ই নয়, তার চেয়েও শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্যায়ে ভাষা হয়ে পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে মাতৃভাষার পাশাপাশি মর্যাদা দেয়া শুরু হয়ে যায়। আর সেই কারণেই একেবারে শুরু থেকে বিশেষ করে শিক্ষা জীবনের প্রারম্ভিক স্তরে অতি আবশ্যক বিদেশী ভাষাকে মৌলিক বিষয়ের অনুষঙ্গ করা হয়। এক সময় প্রচলিত ধারণা ছিল মাতৃভাষা অতি সহজেই নিজস্ব পরিবেশে আয়ত্ত করা তেমন কঠিন কিছু নয়, যা মানুষ স্বাভাবিক উপায়ে শিখে নিতে পারে। কিন্তু একজন উদীয়মান শিশু কিংবা কিশোরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একেবারে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় বিদেশী ভাষার প্রতি যতœবান হয়ে তাকে যথার্থ সময়ে শিখে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। বিশ্ব আঙ্গিনায় যাতে তার অনুপ্রবেশ অতি শৈশবকাল থেকেই শুরু হয়ে যায়। শিশু-কিশোর বয়সই যে কোন ভাষা শিক্ষার উপযুক্ত সময়। কিন্তু নিত্য নতুন গবেষণা পুরনো অনেক ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে। বিদেশী ভাষা শিক্ষার ব্যাপারেও চলে আসা ভাবনায় নতুন চিন্তার অভ্যুদয় হচ্ছে। ভাষা বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে, শিশু-কিশোর বয়সে নয়, বরং পরিণত পর্যায়ে মানুষ অন্য যে কোন ভাষা সহজেই আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়। শিশু বয়সে যা শেখা হয় তা হলো ভিনদেশী ভাষার কিছু শব্দ, যা আদৌ ভাষা শিক্ষায় তেমন সহায়ক হয় না। কারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, তার বুদ্ধিবৃত্তি জগতের বিকশিত হওয়ার সঙ্গে চিন্তা, চেতনার পরিপক্বতা অন্য যে কোন ভাষা শিখতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এই নবতর গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেন উত্তর লন্ডনের স্প্যানিশ নার্সারি স্কুলের পরিচালক কারম্যান র‌্যামপারস্যান্ডার। তার মতে, ৫-৬ বছরের শিশুরা আদতে কোন ভাষা শেখে না, কিছু শব্দ আয়ত্তে আনে মাত্র। দ্রুত সময়ের মধ্যে অনেক শব্দ রপ্ত করা যায় বটে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাতৃভাষার বাক্যেই ব্যবহৃত হয়। একজন পরিপূর্ণ মানুষ যেভাবে তার শব্দ ভা-ারকে সমৃদ্ধ করে, একইভাবে যে কোন ভাষাকেও নিজের দখলে নিয়ে আসতে পারে। শুধু তাই নয়, নতুন ভাষা শিক্ষার ব্যাকরণও রপ্ত করতে তার সময় লাগে না। বিশেষজ্ঞরা একমত পোষণ করে ব্যক্ত করেন শিশু-কিশোররা জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে যা শেখে, তা কোনভাবেই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একজন পরিণত, পরিপক্ব মানুষ এসব ব্যাপারে সচেতন এবং অত্যন্ত মনোযোগী হয়। সুতরাং পাঠ এবং শেখার ক্ষেত্রেও বয়সের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা সঙ্গত।
×