ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাশে থাকার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পাশে থাকার ঘোষণা

ঢাকায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের দু’দিনব্যাপী সফরটি অন্তত দুটো দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হলো মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধানে যুক্তরাজ্য সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা। আর দ্বিতীয়টি হলো যুক্তরাজ্যে বিমানে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার বিষয়টি। প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাজ্য সরকার ঢাকা থেকে লন্ডনে উড়োজাহাজে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল নিরাপত্তার অজুহাতে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিস্ফোরক পদার্থের ভীতিসহ জঙ্গী হামলার আশঙ্কা। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নানা কারণে অরক্ষিত ও অনিরাপদ। এটি সোনা, অবৈধ পণ্য, মাদকদ্রব্য ও অন্যবিধ নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রুটও বটে। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আরোপ করেছিল কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা। পরে যুক্তরাজ্য সরকারের পরামর্শে ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়। বসানো হয় এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম বা ইডিএস মেশিন। অতঃপর যুক্তরাজ্যসহ ইইউ দেশগুলোতে প্রায় অবাধে কার্গো রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকার অবকাশ নেই বললেই চলে। এতে করে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাজ্য সরকার শুরু থেকেই মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তারা নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রীও পাঠিয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে প্রবেশ ও কাজ করার সুযোগ, সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান তথা হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ পোড়ামাটি নীতি অবিলম্বে বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এর জন্য জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে প্রস্তাবে। এ বিষয়ে তহবিল বরাদ্দের জন্য বাজেট কমিটিরও সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ৫টি প্রস্তাব পেশ করেছে। এগুলো হলোÑ সে দেশে চিরতরে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধ করা; জাতিসংঘ মহাসচিবের অধীনে একটি নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং তা পূরণে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা; রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, তাদের নিজ নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; সর্বোপরি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ, বিপুল জনগোষ্ঠী ও স্বল্পপরিসরে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সমর্থ নয়। প্রধানমন্ত্রীর উদারতা, মানবিকতা ও সহানুভূতির কারণে বাংলাদেশ তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়সম্বলহীন শরণার্থীদের জন্য। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই ঔদার্য ও মানবিকতা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য। ওআইসিও রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বলতেই হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারই প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বেশ জোরেশোরে উপস্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং জাতিসংঘে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত ৫ দফা সমস্যাটির সুদূরপ্রসারী সমাধানে প্রভূত সহায়ক হতে পারে। মিয়ানমার সরকার যত দ্রুত এটি বাস্তবায়নে অগ্রসর হয় দেশটির জন্য ততই মঙ্গল।
×