ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেম ইস্যু

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

জেরুজালেম ইস্যু

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জেরুজালেম প্রস্তাব পাস বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের জন্য সুসংবাদ। মানুষ যে এখনও পুরোপুরি ধর্মান্ধ হয়ে ওঠেনি, এখনও অশুভ তৎপরতা এবং ক্ষমতার দম্ভ ও স্বেচ্ছাচারিতাকে অপছন্দ করে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দাঁড়ানো তারই উজ্জ্বল উদাহরণ। বৃহস্পতিবার ভোটাভুটিতে অধিকাংশ সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। যদিও এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, যারা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে তাদের মার্কিন সহায়তায় কাটছাঁট করা হবে। অবশ্য পাস হওয়া প্রস্তাব মানার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি এবং বিপক্ষে মাত্র ৯টি পড়ে। ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই ভোটাভুটি থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে বিশ্বনেতারা প্রায়োন্মাদ ট্রাম্পের হঠকারী সিদ্ধান্তের কতটা বিরোধী। বিশ্লেষকরা যথার্থই বলেছেন, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন জেরুজালেম ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বৈধতা পেল। যদিও প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় ফিলিস্তিন আইনগতভাবে কোন সুবিধা পাবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন সাধারণ পরিষদের ভোটে তা প্রমাণিত হলো। প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করতে পারে না, সেখানে নিজেদের জনগণ নিয়ে আসতে পারে না বা বসতি গড়তে পারে না। চলতি মাসের প্রথম দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীর নিন্দা কুড়ান। এই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত বিশ্ব পরিস্থিতি কতটা নেতিবাচকভাবে বদলে দেবে সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার মৃত্যুঘণ্টা বেজে উঠল বলে। প্রাচীন শহর জেরুজালেম একাধারে মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান। এই শহরকে পুরোপুরি নিজেদের করতে চায় ইহুদীরা। এ নিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে যুগের পর যুগ ধরে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সহিংসতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদী বসতি গড়তে শুরু করে। ১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে ইসরাইল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখন তাদের সমর্থন দেয়নি। পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে প্রথম ইন্তিফাদার (এর অর্থ গণঅভ্যুত্থান) সূচনা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। ওই শান্তি চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনও চায় পূর্ব জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে। শান্তি চুক্তির এত বছর হয়ে গেলেও সঙ্কটের সমাধান হয়নি, সমাধানের কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজেদের দূতাবাস জেরুজালেমে রাখেনি। ইসরাইলে যেসব দূতাবাস আছে, সবই তেল আবিবে অবস্থিত। মার্কিন দূতাবাসটি সেখান থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে কি না, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর সে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। এতদিন পর্যন্ত সব প্রেসিডেন্টই পরবর্তী ছয় মাসের জন্য সিদ্ধান্তটি স্থগিত করতেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্পের ঘোষণায় একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতারই উৎকট প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্ববাসী শান্তি চায়, নতুন করে উত্তেজনা উস্কে দিয়ে ব্যাপক রক্তপাত ঘটানো হোক এটি কোনক্রমেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আগেও বলেছি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচমকা ঘোষণায় যে অস্থিরতা ও আশঙ্কা বিস্তার লাভ করছে, তার দায়দায়িত্ব তার ওপরেই বর্তাবে। উদ্ভূত সঙ্কট থেকে উত্তরণে বিশ্ববাসী তার শুভবুদ্ধি উদয়ের অপেক্ষায়।
×