ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কন্যা শিশুর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

কন্যা শিশুর নিরাপত্তা

ফি-বছর কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়ে থাকে, তবে বিরাজমান পরিস্থিতিতে লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় এমনটা বলা যাবে না। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘কন্যা শিশুর জাগরণ, আনবে দেশের উন্নয়ন’ এটিকে মূলমন্ত্র হিসেবে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা হলে নিঃসন্দেহে তা ফলদায়ক হবে। দেশে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং অগ্রগতি রয়েছে। কিন্তু এখনও কন্যা শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও কন্যা শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কুসংস্কার, সামাজিক অসচেতনতা, অশিক্ষা, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি কারণে ছেলে শিশুদের তুলনায় কন্যা শিশুরা নানা দিক দিয়ে বৈষম্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশে কন্যা শিশুর সংখ্যা দুই কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত কোথাও নিরাপদে নেই কন্যা শিশুরা। একটি কন্যা শিশু তার পরিবারের ভেতরেই প্রথম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে এমনটা বলে থাকে নারী সংগঠনগুলো। কথাটা যে শতভাগ অসত্য এমন নয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি যথার্থই বললেন, কন্যা শিশুর সমঅধিকার এবং নিরাপত্তার বিষয়টি পরিবার থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। তাই কন্যা শিশু, ছেলে শিশু, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। আর সেই পরিবেশ তৈরির জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে। কন্যা শিশুদের আরেকটি বড় বিপদ রয়েছে। সেটি হলো বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমনকি এখন বাল্যবিবাহের ঝুঁকির ভেতর রয়েছে এমন অল্পবয়সী মেয়ে কেউ কেউ নিজের বিয়ে নিজেই ঠেকিয়ে দিচ্ছে সমাজে এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। তারপরও দেশ থেকে এই রীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাল্যবিবাহ যাদের ঠেকানোর কথা বহু এলাকায় তারাই এর মদদদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। জন্মসনদ থাকলে কাজি, আইনজীবী সবাই বিয়ে পড়ানোয় দ্বিধা করেন না। সন্দেহ হলেও প্রশ্ন না তোলার প্রবণতা বেশি, যা কাক্সিক্ষত নয়। এ ধরনের সমস্যায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্মসনদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। সমাজবিজ্ঞানের গভীর পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায়, বাল্যবিবাহ কোন পৃথক সমস্যা নয়। একে দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য সব সামাজিক সমস্যার অংশ হিসেবে। দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, মিডিয়ার দ্বারা নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন, পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্ট সামাজিক ব্যাধি, নারী পাচার, মাদক ব্যবসা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এ সব কিছুই দায়ী বাল্যবিবাহের জন্য। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে শুধু বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এক অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হয়। বরং গ্রামবাংলায় মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাল্যবিবাহের হার কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। এজন্য সামাজিক জাগরণ জরুরী। কন্যা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি ইতিবাচক জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
×