ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

একুশ শতক ॥ মোস্তফা জববর

শিশুরাই হোক প্রোগ্রামার

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১ অক্টোবর ২০১৭

শিশুরাই হোক প্রোগ্রামার

॥ দুই ॥ সাধারণভাবে দেশের শিক্ষিত মানুষদের বেকারত্বের চিত্রটিও সুখকর নয়। জানুয়ারি ১৬ সময়কালে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেশের বেকারত্বের যে চিত্র দেখানো হয়েছে সেটি এ রকম : ‘দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ, নারী ১২ লাখ ৩০ হাজার। যা মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক দশক আগে ছিল ২০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী এ তথ্য পাওয়া গেছে।’ এই খবরেই বলা হয়েছে যে ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের দেয়া তথ্য সঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা শতকরা ১৪.২ ভাগ। শুধু তাই নয় প্রতি বছর নতুন করে ১৩ লাখ বেকার যোগ হচ্ছে। অন্যদিকে একই খবরে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও)-এর ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি-২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ৪৩৩ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সাল শেষে মোট বেকার দ্বিগুণ হবে। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। আবার লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন ¯স্নাতক ডিগ্রীধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।’ শিক্ষিত বেকারদের দুর্ভাগ্য যে তারা একটি অচল শিক্ষা ব্যবস্থার বলী। এই ব্যবস্থায় এমন সব বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে দেশে তো দূরের কথা দুনিয়াতেই যার কোন কর্মসংস্থান নেই। বস্তুত পক্ষে এই অবস্থা দিনে দিনে ভয়াবহ হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষা যে ধরনের দক্ষতা দিচ্ছে সেটি দিয়ে আগামী দিনে কোন ধরনের কাজের যোগ্য হওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে দুনিয়াজুড়ে রয়েছে প্রোগ্রামারদের বিপুল চাহিদা। পৃথিবীর সকল উন্নত দেশ প্রোগ্রামার খুঁজে বেড়ায়। বাংলাদেশেও প্রোগ্রামারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা আমাদের সফটওয়্যারের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামার পাই না। আমরা খুব সংযতভাবেই জানাতে চাই যে বিশ্বে প্রোগ্রামাররা কেবল চাহিদার শীর্ষে নয়, তারাই পায় সর্বোচ্চ বেতন। আমি সে জন্য মনে করি ডিজিটাল দুনিয়াতে সেরা পেশাটির নাম প্রোগ্রামার। আমাদের কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লেও প্রোগ্রামারের সংখ্যা একদমই নগণ্য। এক হিসেবে জানা গেছে যে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ে এমন ছাত্রদের শতকরা ৭ জন মাত্র প্রোগ্রামার হতে পারে। মেয়েদের অবস্থা আরও খারাপ। ওদের শতকরা মাত্র ১ জন প্রোগ্রামার হতে পারে। এই অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য ¯স্নাতক বা কলেজ স্তরে প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্যোগ নিলে হবে না। ওরা যদিও কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে চায়, তথাপি প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্মে না। শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখানোর বিষয়টাকে আমরা একটি ডিজিটাল যুগের শিক্ষা বা তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি। এতে কোন অস্পষ্টতাও রাখতে চাই না আমরা। বরং আমরা চাই শৈশব থেকেই শিশুদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা দেয়া হোক। তবে আমরা বড়দের প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে শিশুদের মাথা ভারি করতে চাই না। স্ক্র্যাচ এমন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা যা দিয়ে কোন কোড লিখতে হয় না এবং কেউ একে খেলা হিসেবেই নিতে পারে। আমি মনে করি শিশুদের হাতে ছোট আকারের ল্যাপটপ/ট্যাব প্রদান করে ওদের সাধারণ লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং শেখার কাজটাও যুক্ত করা যেতে পারে। এবার ভাবুন তো দুই কোটি বিদ্যমান শিশু এবং প্রতি বছরে ২৫ লাখ নতুন শিশু, তাদের সবার হাতে ডিজিটাল যন্ত্র, তাদের শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ডিজিটাল ক্লাসরুম, শিক্ষার ব্যবস্থাপনার জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বাজারটা কত বড়? এর ফলাফলটাও ভাবুন-১০ বছর পরে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রোগ্রামিং জানা কত বিশাল একটি তরুণ প্রজন্ম আমরা পাব। আসুন সেই স্বপ্ন পূরণে শিশুদের প্রোগ্রামার বানাই। কাজটিকে কেবল আলাপ আলোচনার মাঝেই সীমিত রাখা সঠিক হবে না বলে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি যাতে শিশুরা প্রোগ্রামার হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বেসিসের সভাপতি হিসেবে আমি শুরুতেই বেসিসকে শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর জন্য কাজে লাগানো শুরু করলাম। বেসিস গত ২৫ আগস্ট ১৭ এ অনুষ্ঠিত শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর একটি কাজের জন্য যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রদান করে সেটি এ রকম : ‘বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুরাই হবে প্রোগ্রামার। দুনিয়াজুড়ে রয়েছে প্রোগ্রামারদের বিপুল চাহিদা। পৃথিবীর সব উন্নত দেশ প্রোগ্রামার খুঁজে বেড়ায়। বিশ্বে প্রোগ্রামাররা কেবল চাহিদার শীর্ষে নয়, তারাই পায় সর্বোচ্চ সম্মানী ও সম্মান। ডিজিটাল দুনিয়াতে সেরা পেশাটির নাম প্রোগ্রামার। বাংলাদেশেও প্রোগ্রামারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে সফটওয়্যারের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামার পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ক¤িপউটার বিজ্ঞান পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লেও তুলনামূলকভাবে বাড়েনি প্রোগ্রামারের সংখ্যা। বরং কম্পিউটার বিজ্ঞান যারা পড়ে তাদের মাঝেও রয়েছে প্রোগ্রামিং ভীতি। আমাদের কাছে প্রাপ্ত অথ্য অনুসারে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ে এমন ছাত্রছাত্রীদেরও শতকরা মাত্র ৮ জন প্রোগ্রামার হতে চায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুসারে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ৫৮ জন কয়েক মাসের মধ্যে এই বিষয় পড়া বাদ দিয়ে দেয়। তাদের কাছে বিষয়টি জটিল মনে হয়। আমরা মনে করি, এই অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য কেবল স্নাতক বা কলেজ স্তরে প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্যোগ নিলে হবে না। প্রোগ্রামার তৈরির জন্য শৈশব থেকেই শিশুদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা দেয়া প্রয়োজন। এ জন্য তাদের উপযোগী প্রোগ্রামিং শিক্ষা দিতে হবে, যার সহজতম উপায় হলো স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং শেখানো। স্ক্র্যাচ এমন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা যা দিয়ে কোন কোড লিখতে হয় না এবং কেউ একে খেলা হিসেবেই সেটি নিতে পারে। আজ বেসিস শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্ক্র্যাচ শেখানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে একটি মাইলফলক উদ্যোগ গ্রহণ করল। আমরা বেসিস থেকে মূলত একটি শিশু প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই। তবে আমাদের এই কাজটি একটু চ্যালেঞ্জিং। বড়দের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য হলো যে, কেবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেই হয়। যারা অংশ নেবে তারা প্রস্তুতই থাকে। কিন্তু শিশুদের বিষয়টি হচ্ছে যে, আগে তাদের শেখাতে হবে এবং তারপর প্রতিযোগিতায় তাদের ডাকতে হবে। আমরা শিশুদের সরাসরি শেখাব এবং একই সঙ্গে শিশুদের শেখানোর জন্য শিক্ষক- শিক্ষিকাদেরও শেখাব। আমরা আমাদের বিশাল যাত্রার সূচনা করলাম আজকে। এরই ধারাবাহিকতায় বেসিসের উদ্যোগে আয়োজিত হবে শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এটি ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে আয়োজিত হবে।’ শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য বেসিস আয়োজিত শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে বেসিস সভাপতি এই কথাগুলো বলেন। বেসিস তার অঙ্গ সংগঠন বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইটিএম) সহায়তায় গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট ২০১৭) রাজধানীর কাওরান বাজারের বিআইটিএমের ৩০২ নম্বর ল্যাবে শুধু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং পরিচিতি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত করা এবং তারা যাতে তাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। উদ্বোধনকালে বেসিস সভাপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ও আগামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। আমরা স্নাতক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখানোর কথা ভাবি। কিন্তু ওরা বস্তুত শৈশব থেকেই প্রোগ্রামিংয়ের ধারণা পেতে পারে। আমরা শিশুদের জন্য সেই ব্যবস্থাটিই করতে চাই। শিশুদেরকে প্রোগ্রামিং শেখানোর মাধ্যমেই সেটি সূচনা করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে ‘শিশু-কিশোরদের প্রোগ্রামিং শিক্ষা’ শীর্ষক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি শিক্ষার্থীদের জন্য স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং শেখানো হবে। আমরা ২০১৮ সালের শুরুতে এইসব শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে একটি জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। ” এই প্রশিক্ষণের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন বিআইটিএম এর প্রশিক্ষক জনাব সিরাজুল মামুন। সহযোগি হিসেবে ছিলেন মেহনাজ শারমিন মোহনা ও ফৌজিয়া আকতার নিহা। জনাব সিরাজুল মামুন বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরবর্তীতে শিশু-কিশোরদের কাছে এই শিক্ষা পৌঁছে দেবেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য একটি প্রজন্ম তৈরি করা সম্ভব হবে। এই আয়োজনের সূচনায় থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। এই আয়োজনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ডিক্যাস্টালিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাবিলা ইনুন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামীর প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে প্রোগ্রামিং শিক্ষার বিকল্প নেই। বেসিসের এই উদ্যোগের সঙ্গে ডিক্যাস্টালিয়াকে রাখার জন্য ও কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য বেসিস, বিআইটিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। প্রথম ব্যাচে বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুল সোসাইটির ৩০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা আগামীতে আরও শিক্ষকের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন বলে সোসাইটির প্রধান ইয়াহিয়া খান রিজন জানান। প্রশিক্ষণার্থী ইয়াহিয়া খান বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে শিশুদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা যাবে। বড় হয়ে প্রোগ্রামার হওয়ার ভয় থাকবে না তাদের মধ্যে। তবে শিক্ষকদের আরও বেশি শেখার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং।’ আমি আশাবাদী যে ডিজিটাল শিক্ষা সমিতি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এবং স্কুল পর্যায়ে স্ক্র্যাচ শেখার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইতোমধ্যেই তারা পরের ব্যাচের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বেসিস ২৫ আগস্ট যে আয়োজন করেছিল সেটির সূত্র ধরে বলা যেতে পারে যে, বস্তুত শিশুদের জন্য বর্ণমালা, অঙ্ক, ইংরেজী বা এই জাতীয় যেসব প্রাথমিক বিষয় শেখানো হয় তেমন করেই তাকে কম্পিউটারে সৃষ্টি করার শুরুর কৌশলগুলো শেখাতে হবে। এর সফলতার জন্য প্রয়োজন হবে একটি সমন্বিত কার্যক্রম। বেসিস এরই মাঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই সমন্বিত কার্যক্রমটি দু’ভাবে গুছিয়ে আনা হবে। প্রথমত বেসিস তার অঙ্গ সংগঠন বিআইটিএমের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজ অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে বেসিস তার ছাত্র ফোরামের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে স্ক্র্যাচ শেখানোর উদ্যোগ নেবে। এই উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি স্ক্যাচ শিক্ষার একটি প্লাটফরম গড়ে তুলতে হবে। স্ক্র্যাচের শেখার উপাত্তগুলোকেও বাংলা ভাষায় রূপান্তর করতে হবে। এটি প্রত্যাশা করা যেতেই পারে যে এভাবে সমন্বিত উপায়ে আমরা যদি প্রোগ্রামিং শেখার বিষয়টাকে শিশুদের কাছে পৌছানো শুরু করি তবে এক সময়ে ওরাই হবে প্রোগ্রামিং এর সবচেযে বড় ভিত। বেসিস এর এই উদ্যোগের বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্ক্র্যাচ শেখার আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। অনেকেই শিশুদের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তাদের গান শেখানো থেকে কারাতে শেখানো পর্যন্ত নানাবিধ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আমি মনে করি প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্যও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠতে পারে। নিজে নিজে স্ক্র্যাচ শেখা মোটেই কঠিন নয়। ইন্টারনেটে এমআইটি ল্যাবের যঃঃঢ়ং://ংপৎধঃপয.সরঃ.বফঁ/ ঠিকানায় গিয়ে স্ক্র্যাচ শেখার সকল উপাত্তই পাওয়া যেতে পারে। আমি ২৯ আগস্ট ১৭ এই সাইটে গিয়ে ২ কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৪টি স্ক্র্যাচ প্রকল্পের হিসাব পেয়েছি। দুনিয়া জোড়া মানুষ এসব প্রকল্প শেয়ার করেছে। প্রতি মুহূর্তে এর পরিমাণ বাড়ছে। ফলে এমন জনপ্রিয়, সহজ ও সর্বজনগ্রাহ্য একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার জন্য প্রকৃতপক্ষে একটু উদ্যোগই দরকার। সবার জন্য একটি সুখবর আমি দিতে পারি যে আমরা বেসিস থেকে বাংলা ভাষায় শিশুদের উপযোগী করে স্ক্র্যাচ শেখার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহসাই এটি শিশুদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব বলে প্রত্যাশা করছি। আমরা এই পুস্তিকাতে কিছু প্রকল্পও যুক্ত করব। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি তখন শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কথাও বলি। এই রূপান্তরটি কেবলমাত্র মুখের কথা নয়। বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য যেমনি এর ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি বদলাতে হবে তেমনি করে পাঠ্য বিষয়ও বদলাতে হবে। আমি বরাবরই শিশুশ্রেণী থেকে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করানোর পক্ষে। আমরা প্রোগ্রামিং শেখানোর কাজটাই সেই স্তরেই শুরু করতে পারি।
×