ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদই পারে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিরাপত্তা পরিষদই পারে

জাতিগত নিপীড়ন তথা গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, বিশেষভাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর অবস্থান ভিন্ন অন্য কোন পথ ও পন্থা নেই এই মুহূর্তে। এছাড়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কম। অবরোধ আরোপ ছাড়াও সহিংসতা বন্ধে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষমতা রাখে নিরাপত্তা পরিষদই। যদিও এ ধরনের আলোচনার পরিসমাপ্তি কখনও কখনও হয়ে ওঠে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অবশ্যই এই প্রশ্নে একটা ন্যূনতম সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে পরিষদের সব সদস্যকে। কিন্তু এ নিয়ে শঙ্কা ও সংশয় রয়ে যায়, সবাই একমত হতে পারবে কিনা। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে পুনরায় বৈঠকে মিলিত হচ্ছে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদ। শীঘ্রই এ বৈঠক হতে যাচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো মিলিত হতে যাচ্ছে সংস্থার পাঁচ স্থায়ী সদস্যসহ পনেরো সদস্য। বৈঠক আয়োজনের উদ্যোক্তা স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অস্থায়ী সদস্য মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেন। পরিষদের সভাপতি ইথিওপিয়া অবশ্য জাতিগত নিধনের নিন্দা জানিয়েছে। এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ‘ব্রিফ’ করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের ওপর চাপ বাড়ছে। সমালোচনা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর থেকে এই ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ দু’দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে। এরপরও মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করেনি। ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে কোন কিছুই কার্যকর হবে না। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম বৈঠক বসে আগস্টের শেষ দিকে। তখন কোন বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়া হয়নি। দ্বিতীয় বৈঠক হয় ১৩ সেপ্টেম্বর। তাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। সমালোচনা করা হয়েছে অভিযানের নামে বেসামরিক লোকদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের। চীন, রাশিয়া ভিন্নমত পোষণ করেনি। এই বৈঠকে রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের সুরক্ষা, সামাজিক ও আর্থিক কর্মকা- স্বাভাবিক করা, শরণার্থী সমস্যা নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। পরিষদের বিবৃতিতে শরণার্থীদের সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং জাতিসংঘসহ অন্য সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে সদস্যরা রাখাইন পরিস্থিতির একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের বিষয়ে সকলে একমত হয়। এমনকি কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু বিবৃতিতে মিয়ানমারের এই আচরণের নিন্দা জানানো হয়নি। এবারের বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর চাপ আসবে, এমন ধারণা করা হচ্ছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন পাশ্চাত্যের প্রথম কোন নেতা, যিনি এই হত্যাকা-কে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার দেশে মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণদান স্থগিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে নীরব থাকলেও এখন সরব। আর জাপান আলোচনায় অদ্যাবধি কোন ভূমিকা রাখেনি। মানবিক এই সঙ্কট নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য রাখেনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও। ওই দেশে জাপানের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে বলেই হয়ত এই নীরবতা। রাশিয়া ও চীন গণহত্যার বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সনদে মিয়ানমার সই না করায় গণহত্যায় যুক্ত জেনারেল ও রাজনীতিকদের মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে বিচারের সুযোগ নেই। তবে নিরাপত্তা পরিষদে তাদের বিচারে আইসিসিকে সুপারিশ করলে তা হতে পারে। এ ধরনের অনেক ক্ষমতা পরিষদের রয়েছে। যে কারণেই নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বৈঠকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ না থাকলেও কমপক্ষে মিয়ানমারের সহিংসতার নিন্দা ও তা বন্ধ করা এবং শরণার্থী ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত থাকলে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে। কোন সদস্য রাষ্ট্রের আনীত প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়া যেন ভেটো না দেয় সেজন্য তাদের প্রতি চাপ বাড়াতে হবে। লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, শোষিত, নাগরিকত্বহীন রোহিঙ্গাদের ধ্বংস দেখেও নিরাপত্তা পরিষদ যদি থাকে নির্বিকার, তাহলে দেশে দেশে বাড়বে গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত জনগণের সংখ্যা। নিরাপত্তা পরিষদের হাতে যেহেতু রয়েছে চাবিকাঠি, তাই তাকেই নিপীড়িত মানবতার পক্ষে হতে হবে সোচ্চার।
×