ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর পুষ্টি-

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শিশুর পুষ্টি-

সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই তার খাদ্য তালিকায় থাকে বিশুদ্ধ পানি এবং মাতৃদুগ্ধ। তবে মায়ের দুধ পানির অভাব পূরণ করে দেয়। সুতরাং শিশুর প্রথম এবং প্রধান খাবারই মায়ের দুধ। বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রথম ছয় মাস শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি নেই বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদনে উঠে আসে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় বাংলাদেশে স্থূল মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। স্থূল হওয়ার সংখ্যা পুরুষের চাইতে নারীই বেশি। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব। শুধু তাই নয়, স্থূল মায়ের গর্ভজাত সন্তান মাতৃজঠর থেকেই কম ওজন নিয়ে পৃথিবীতে আসে। নবজাতক শিশুর ওজন স্বল্পতায় যদি মাতৃদুগ্ধের মতো অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে শিশুটি শুধু স্থূলকায়ই হবে না পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শারীরিক দুর্বলতারও শিকার হতে পারে। আর এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সঠিক অবস্থানে নেই বলে গবেষণায় বলা হয়। স্থূলতার সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো দুরারোগ্য অসুখও সঙ্গত কারণেই বাসা বাঁধে। নারীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। ২২ শতাংশ নবজাতক জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে পৃথিবীতে আসে। শুধু তাই নয়, ৪৫% শিশুকে জন্মের পর পুরো ৬ মাস মায়ের দুধ সঠিকভাবে খাওয়ানো হয় না। এর কারণে রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে ৪৩.৫ শতাংশ শিশু। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পুষ্টি পরিস্থিতির অগ্রগতির পরিমাপের জন্য কিছু সূচকের ওপর নির্ভর করে থাকে। এরই আলোকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খর্বতা এবং বাড়তি ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভাল হলেও রক্ত স্বল্পতা কমানো কিংবা মায়ের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে দেশটির সঠিক অগ্রগতি হচ্ছে না। শিশু কিংবা মায়ের পুষ্টির ব্যাপারটি সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। চারপাশে থাকা বহু পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের সামনেই উপস্থিত থাকে। শুধু প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে আমরা সন্তানদের কিংবা নিজেরাও পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ থেকে দূরে সরে আছি। আমাদের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গিই এই অনাকাক্সিক্ষত পুষ্টিস্বল্পতা থেকে বাঁচানোর একমাত্র পথ। ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো শুধু পুষ্টির পরিপূরক তা নয়, বরং সন্তানের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকাংশে বেড়ে যায়। আর পুষ্টিকর অন্যান্য খাবার পাওয়া যাবে পারিবারিক আঙিনায় নিজস্ব খাদ্য তালিকায়। যেখানে অর্থ, সময় কিংবা অন্য কোন কিছুরই বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অতি পরিচিত পুষ্টিকর খাবার যোগ করা তেমন কোন কঠিন ব্যাপার নয়। মায়ের দুধের বিকল্প কোনভাবেই বাজারের কৌটার দুধ হতে পারে না। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সহজ হবে। বাংলাদেশে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন পুষ্টির ঘাটতি এক-চতুর্থাংশ। প্রজননক্ষম প্রতি আট জন নারীর ১ জন খর্বকায়। আর বাল্যবিয়ে নামক সামাজিক অভিশাপ তো আছেই রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি আর অকাল মাতৃত্বের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। প্রতিবেদনে এসব তথ্যের ওপরও বিশেষ জোর দেয়া হয়। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। সুতরাং কোনভাবেই তাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠাকে অপুষ্টি আর রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হতে দেয়া যেতে পারে না। এ ব্যাপারে প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যও সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। সুস্থ মা-ই পর্যাপ্ত বুকের দুধ আর পুষ্টিকর খাদ্য দিয়ে তার সন্তানকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
×