ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৪ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

আবারও হুমকির মুখে পড়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সাময়িক বৈধতার জন্য ই-কার্ডের আবেদনের সময়সীমা গত শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়ে যাওয়ায় অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। সে দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পুলিশী অভিযানে কয়েক হাজার শ্রমিককে আটক করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে কয়েক শ’ বাংলাদেশীও। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সে দেশে প্রায় ৬ লাখ অবৈধ বিদেশী শ্রমিক অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২৩ শতাংশ। ইতোপূর্বে গত বছর ঢাকায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হলো, এর একদিন পরই মালয়েশীয় সরকার বিষয়টি অস্বীকার করে। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বলেন, আপাতত কোন দেশ থেকেই সেদেশে কর্মী নেয়া হচ্ছে না, বরং কর্মক্ষেত্রে সেদেশের নাগরিকদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দুটি দেশের মধ্যে কোন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বিষয়টি নাকচ করা যায় কিনা সেটি কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচ্য বিষয়। তবে এতে স্বভাবতই অগুনিত বাংলাদেশী, যারা সেদেশে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তারা বিস্মিত, হতবাক, এমনকি আশাহত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৮৭ জন বাংলাদেশী কর্মরত। এর বাইরেও অবৈধ কর্মরত শ্রমিক থাকা বিচিত্র নয়। তারা যে ভাল আছেন এমন কথা বলা যাবে না। স্থানীয় বাংলাদেশী দূতাবাস থেকেও তারা কোন সহায়তা পান না বললেই চলে। এর আগে শোনা গেছে যে, ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক নেবে বিভিন্ন পর্যায়ে। ধনী দেশ বিধায় কাতারের শ্রমবাজার যে আকর্ষণীয় সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তদুপরি দেশটি রূপকল্প-২০৩০’র আওতায় বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশÑ কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও অন্যত্র বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় আপাতত ভরসা কাতার। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে হয়ে পড়ায় কাতারের শ্রমবাজারও নাজুক। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম বেশ নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। একবার শোনা গিয়েছিল যে, আফ্রিকার কোন কোন দেশÑ দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজিরিয়ায় পতিত জমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া হবে। সম্ভবত লাভজনক বিবেচিত না হওয়ায় সে ভাবনা বেশিদূর এগোতে পারেনি। তদুপরি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
×